Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

থমকে শহর, পথে নামল না ৩৩০ বাস, বন্ধ দোকান

ঊষাগ্রামের শনি মন্দিরের কাছে জিটি রোডের শহরগামী লেনে কুড়ি ফুট দূরত্বে দু’টি ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ।

রাজপথে: বিজেপির মিছিল উপলক্ষে পুলিশের ব্যারিকেড। আসানসোলের জিটি রোডে শুক্রবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

রাজপথে: বিজেপির মিছিল উপলক্ষে পুলিশের ব্যারিকেড। আসানসোলের জিটি রোডে শুক্রবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) ও নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থনে পুলিশি ‘অনুমতিহীন’ মিছিল করল বিজেপি। আর তাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ রাখতে জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড করল পুলিশ। তার জেরে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আসানসোলের জিটি রোডের কালীপাহাড়ি মোড় থেকে ঊষাগ্রাম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় চাকা গড়াল না যানবাহনের। ভোগান্তির মুখে পড়লেন নানা অংশের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্ভোগের সূত্রপাত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। ঊষাগ্রামের শনি মন্দিরের কাছে জিটি রোডের শহরগামী লেনে কুড়ি ফুট দূরত্বে দু’টি ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। সাড়ে ১১টা নাগাদ বন্ধ করা হয় শহর থেকে বাইরে বেরনোর লেনও। কালীপাহাড়ি ব্রিজের কাছেও পুলিশ ব্যারিকেড করে। আসানসোলের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডে আন্তঃশহর মিনিবাস, দূরপাল্লার বাস, যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে জুবিলি মোড় দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়। কিন্তু তাতে যাত্রাপথ ও সময়, দু-ই বাড়ে।

এই পরিস্থিতিতে মূল যে দু’টি ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে বলে শহরবাসী জানাচ্ছেন, তা হল —

স্তব্ধ যাতায়াত: কালীপাহাড়ি মোড় থেকে ঊষাগ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। স্কুল শুরু-শেষের সময়ে ভোগান্তির মুখে পড়ে পড়ুয়ারা। যদিও পড়ুয়াদের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সকে যাতায়াতে ছাড় দিয়েছিল পুলিশ।

কিন্তু আসানসোলের মহিলা কল্যাণ, ইস্টার্ন রেলওয়ে, জহরমল, ঊষাগ্রাম বয়েজ়, গার্লস-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের বড় অংশই যাত্রী পরিবহণ ব্যবহার করে। তাদের বেশির ভাগকেই চূড়ান্ত নাকাল হয়। সমস্যায় পড়েন আসানসোল বিবি কলেজের পড়ুয়ারাও। নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমনা তরফদার বলে, ‘‘ঊষাগ্রাম থেকে কালীপাহাড়ি মোড় পর্যন্ত হেঁটেছি। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রানিগঞ্জের বাস পেয়েছি।’’

সমস্যায় পড়েন নানা সরকারি ও বেসরকারি অফিসের যাত্রীরাও। সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মিছিল হবে না শুনেছিলাম। তার পরেও দেখলাম ব্যারিকেড। সিটি বাসস্ট্যান্ডে বাস নেই। ট্রেন ধরে রানিগঞ্জে গেলাম। বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হয়েছে।’’

প্রভাব ব্যবসায়: এ দিনের মিছিল ঘিরে ‘নিরাপত্তা-ব্যবস্থায়’ ওই তিন কিলোমিটার এলাকায় দোকানপাট প্রায় বন্ধ। রাজ্যের অন্যতম বাজার আসানসোল বাজারেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। অনেক দোকানও বন্ধ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। তড়িৎ সান্যাল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আজ বিক্রি প্রায় হলই না।’’ প্রভাব পড়েছে পরিবহণ ব্যবসাতেও। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, ১৮০টি মিনিবাস চলাচল করতে পারেনি। ফলে, পরিবহণ ব্যবসায়ীদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আসানসোল বাস অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ বিজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৫০টি বড় বাস চলতে পারেনি। অনেক টাকার ক্ষতি হল আমাদের।’’

রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি এবং তাকে কেন্দ্র করে তৈরি পরিস্থিতিতে শহর স্তব্ধ হওয়ায় সরব হয়েছেন শহরের নাগরিকেরা। আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত বসু বলেন, ‘‘যাঁর, যা করার রাস্তাকে ছাড় দিয়ে করুন।’’ প্রধান শিক্ষক আশিস দাসের বক্তব্য, ‘‘জনজীবন ব্যাহত করে আন্দোলন হয় না।’’

তবে বিজেপির রাজ্য নেতা তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক মিছিলে পুলিশ বাধা না দিলে এই হাল হত না। আমাদের অবরোধের জেরে শহর অচল হয়নি, পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য তা হয়েছে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (‌সেন্ট্রাল) সায়ক দাস বলেন, ‘‘শহরবাসীর নিরাপত্তার জন্যই যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol BJP CAA NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy