Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

‘বালির ফাঁদেই বিপদ হচ্ছে বারবার’

মঙ্গলকোটের পালিগ্রাম, কোগ্রাম, নতুনহাট, ভাল্ল‍্যগ্রাম, ধ্যান্যরুখি, লাখুরিয়া, কেতুগ্রামের রসুই, চরখি, কাটোয়ার রাজুয়া, অগ্রদ্বীপ-সহ বেশ কিছু এলাকায় ‘বৈধ’ বালিঘাট রয়েছে।

উদ্ধার হল অজয়ে নিখোঁজ জগন্নাথ ঘোষের (৪০) দেহ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

উদ্ধার হল অজয়ে নিখোঁজ জগন্নাথ ঘোষের (৪০) দেহ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, কাটোয়া মহকুমায় ভাগীরথী, অজয়ে কোথাও বালির অবৈধ ঘাট নেই। কিন্তু বুধবার অজয়ে ডুবে কেতুগ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পরে, নানা প্রান্তের বাসিন্দা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বালির ‘অবৈধ কারবার’ নিয়ে ফের সরব হয়েছে।

মঙ্গলকোটের পালিগ্রাম, কোগ্রাম, নতুনহাট, ভাল্ল‍্যগ্রাম, ধ্যান্যরুখি, লাখুরিয়া, কেতুগ্রামের রসুই, চরখি, কাটোয়ার রাজুয়া, অগ্রদ্বীপ-সহ বেশ কিছু এলাকায় ‘বৈধ’ বালিঘাট রয়েছে। ইজারাদারেরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বালি তোলার ‘লিজ’ নেন। নদীর পাড় থেকে ২০০ মিটার দূরে বালি তোলার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সে সব নিয়ম মানা হয় না বলেই অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, সরকার চিহ্নিত এলাকার বাইরে গিয়ে নদীগর্ভে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে।

কেতুগ্রামের চরখি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের এলাকা দিয়ে দিনভর অতিরিক্ত বালিবোঝাই ডাম্পার যাতায়াত করছে। বেশির ভাগ বালিই বিক্রি করা হয় নদিয়ায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা জানান, ‘অবৈধ’ বালির দর বেশ কম। মানও বৈধ বালির মতোই। তিনিই জানান, রসিদ-সহ একশো সিএফটি (ঘনফুট) বালির দর সাধারণ ভাবে, ২,০০০ থেকে ২,২০০ টাকা। একই পরিমাণ রসিদ ছাড়া অবৈধ বালির দর, ১,২০০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালির বৈধ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই বালি তোলা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তোলা দিতে হয়। ফলে, রোজগার বাড়াতে এই পথ নেন অনেকেই।’’

কিন্তু এই কারবারের জেরে বিপত্তি বাড়ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বুধবার জগন্নাথবাবু নিখোঁজ হওয়ার পরে, তাঁর ছেলে সুফলবাবু এবং বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেন, নদীগর্ভে যন্ত্র নামিয়ে বালি তোলা হওয়ায় নানা জায়গায় গভীর নদী-খাত তৈরি হয়েছে। ফলে, প্রায়ই ঘটছে বিপত্তি। এ প্রসঙ্গে তাঁরা গত কয়েক বছরে আরও তিন জনের তলিয়ে যাওয়া, গত বছর দু’টি মোষের তলিয়ে যাওয়ার উদাহরণও দিচ্ছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘বালির ফাঁদে বিপদ বাড়ছে।’’

এই ‘অবৈধ’ কারবার কী ভাবে চলছে, তা নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিরোধী নেতারা। কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বালির অবৈধ ঘাট চলছে। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের মদতেই এই কাজ চলে।’’ একই অভিযোগ বিজেপি নেতা কৃষ্ণ ঘোষেরও। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, ‘‘বাম আমলেই অবৈধ বালিঘাটগুলি তৈরি হয়েছিল। আমরা তা বন্ধ করেছি। কোথাও কোনও রকম অবৈধ কারবারের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানিয়ে পদক্ষেপ করা হয়।’’

বালির অবৈধ কারবার চলার অভিযোগ স্বীকার করেননি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (কাটোয়া) বীরেন দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এলাকায় অবৈধ বালিঘাট নেই। তবে ইজারাদারেরা লিজ় দেওয়া সীমানার বাইরে গিয়ে বালি তুলছেন কি না, সেটা খোঁজ নেওয়া হবে। এমনটা কেউ করে থাকলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ajay River Death Sand Collection Sand Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE