Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

সহকর্মীদের সাহায্য করতে ফের নেপাল যাচ্ছেন স্বরূপ

পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন মাটি কাঁপছে। মন্দিরে ঢোকার মুখে তখন চলছে রক্তদান শিবির। কয়েক মুর্হূতের মধ্যেই তার উপর ভেঙে পড়ল মন্দিরের একাংশ। ভূমিকম্পের পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। তবু নিজের চোখে দেখা ধ্বংসের মূর্হূতগুলো নেপালের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত কাটোয়ার আদর্শপল্লির স্বরূপ প্রামাণিকের মনে এখনও টাটকা।

স্বরূপ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

স্বরূপ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন মাটি কাঁপছে। মন্দিরে ঢোকার মুখে তখন চলছে রক্তদান শিবির। কয়েক মুর্হূতের মধ্যেই তার উপর ভেঙে পড়ল মন্দিরের একাংশ। ভূমিকম্পের পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। তবু নিজের চোখে দেখা ধ্বংসের মূর্হূতগুলো নেপালের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত কাটোয়ার আদর্শপল্লির স্বরূপ প্রামাণিকের মনে এখনও টাটকা। দিন কয়েক খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে দু’দিনের জন্য কাটোয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি। চোখেমুখে এখনও স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ। তার মধ্যেই সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফের নেপালে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

স্বরূপবাবু চেন্নাইয়ের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। সংস্থাটি নেপালের বিভিন্ন জায়গায় পরিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। ভূমিকম্পের পর থেকে পাঁচ দিন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে থাকার পরে বৃহস্পতিবার সংস্থার কলকাতার অফিসে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে কাটোয়াতে ফিরে বাবা-মায়ের কাছে দু’দিন থাকার পর ফের কলকাতা ফিরে গিয়েছেন। আগামী ১২ মে ফের কাঠমান্ডু ফিরে যাওয়ার কথা তাঁর। ভূমিকম্পের দিন থেকে ছেলের ঘরে না ফেরা পর্যন্ত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি স্বরূপের বাবা-মা। ছেলে ফিরে এসে তাঁদের বলেছেন ভূমিকম্প পরবর্তী নেপালের দুর্দশার কথা।

স্বরূপবাবু জানান, সাত মাস নেপালে থাকার পর শনিবার রাতেই দেশে ফেরার কথা ছিল। তাই সে দিন সকালে পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎই মন্দির চত্বরে থাকা পশু-পাখির দল অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। কম্পন শুরু হওয়ার পরে অনেকে দৌড়ে মন্দিরের ভিতরের ফাঁকা জায়গায় আশ্রয় নেন। মন্দির চত্বরে চলা রক্তদান শিবিরের উপর হুড়মুড়িয়ে মন্দিরের একাংশ ভেঙে পড়ে। আহত হন দু’জন নার্স-সহ কয়েক জন। চারপাশের বাড়িগুলি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে।

স্বরূপবাবু বলেন, ‘‘মন্দিরের কাছেই একটি আবাসনে থাকতাম। ভূমিকম্পের পর ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় সেখানে গিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই। বাড়ির গায়ে বড় ফাটল। উপরের তলা ভেঙে ঝুলছে। পরে জানতে পারি আমার গাড়ির চালকের বোন ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি চাপা পড়ে গিয়েছেন।” তিনি জানান, ২০ জন ভারতীয় পরিবারের সঙ্গে তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই পান। সেখানে প্রথম দিন জল-খাবার কিছুই জোটেনি। পরের পাঁচ দিন শুকনো খাবার খেয়েই দিন কেটেছে তাঁদের।

কয়েক দিন নিজের দেশে থাকার পরেই ফের পড়শি দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়র স্বরূপবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে কাটোয়াতে ফিরেছি। দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে। নেপালে এখন বিশুদ্ধ জলের হাহাকার চলছে। জল প্রকল্পগুলিকে সারিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাঠমান্ডু ফিরব।” ছেলের ফের নেপালে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু স্বরূপ তাঁদের বুঝিয়েছেন বিপদের সময় পড়শি দেশের পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা। স্বরূপের মা অসীমাদেবী এখন বলছেন, “ছেলেকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা তো হবেই! কিন্তু ছেলে আমাদের বুঝিয়েছে ওর বেশিরভাগ সহকর্মী এখন নেপালে রয়েছেন। সেখানকার মানুষের পরিশুদ্ধ পানীয় জলের খুব প্রয়োজন।”

সহকর্মীদের টানেই ফের ভূমিকম্পের দেশে ফিরে যেতে চান কাটোয়ার এই ভূমিপুত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy