দেওয়াল লিখছেন বিজেপি প্রার্থী অচিন্ত্য কর্মকার। পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালে। — নিজস্ব চিত্র।
ভোট-যুদ্ধে এলাকায় যিনি প্রার্থী, তিনিই কার্যত ‘একা’ সৈনিক! ভোট প্রচার থেকে দেওয়াল লেখা, কার্যত একাই সারছেন ওঁরা। পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্তে এমনই কয়েক জন বিজেপি প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির জেলায় সংগঠন নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। যদিও, বিজেপি নেতৃত্ব এর জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছেন। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
অন্ডালের উখড়া পঞ্চায়েতের ২০৮ নম্বর সংসদের বিজেপি প্রার্থী দলের আসানসোল জেলা ওবিসি সেলের সহ-সভাপতি অচিন্ত্য কর্মকার। তাঁকে কার্যত একাই বাড়ি-বাড়ি প্রচার থেকে দেওয়াল লিখতে দেখা যাচ্ছে। উখড়া পঞ্চায়েতেরই ২০৯ নম্বর সংসদ থেকে বিজেপি প্রার্থী মৌ ভান্ডারী একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। তাঁর স্বামী দিনমজুর। দশ হাজার টাকা ধার নিয়ে রানিগঞ্জ থেকে শিল্পী আনিয়ে কয়েকটি দেওয়াল লেখাতে হয়েছে তাঁকে, জানান মৌ।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, প্রথমত, এলাকায় সংগঠন তৈরি হয়নি বিজেপির। সে কথার প্রতিধ্বনি অচিন্ত্যের বক্তব্যেও। তাঁর কথায়, “উখড়ায় দলের কার্যকারিণী বৈঠক হয়েছিল। তাতে স্থানীয় এলাকার সাত জন কর্মী যোগ দিলেও, তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমি ভোট-ময়দান ছাড়ব না কোনও পরিস্থিতিতেই।” দ্বিতীয়ত, বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যই এই হাল। সম্প্রতি দেওয়াল লেখার সময়ে জামুড়িয়ার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী রমেশ ঘোষ, চিচুড়িয়ার পঞ্চায়েতের প্রার্থী সাগর রুইদাস ও স্বরূপ গোপ তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ করেছিলেন। রমেশ বলেন, “সন্ত্রাসের ভয়ে সক্রিয় কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় বাধ্য হয়ে বেশ কিছু এলাকায় প্রার্থীদের নিজেদেরই দেওয়াল লিখতে হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পীরা ভয়ে দেওয়াল লিখতে চাইছেন না।” সন্ত্রাসের জেরে দেওয়াল লেখাই যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ২০ নম্বর সংসদের বিজেপি প্রার্থী সমীর মণ্ডলের।
এ দিকে, মনোনয়ন-পর্বের পরে ভোট-ময়দানে প্রার্থীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ীও জেলার আটটি ব্লকের মধ্যে পাঁচটিতে বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতির ‘দৈন্য-দশা’ বোঝা যাচ্ছে। বারাবনি, জামুড়িয়া, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা ও পাণ্ডবেশ্বরে, এই পাঁচটি ব্লকে পঞ্চায়েত স্তরে ৬৩৮টি সংসদ রয়েছে। বিজেপি লড়ছে মাত্র ২৩৮টিতে। অর্থাৎ শতাংশের বিচারে মাত্র ৩৭ শতাংশ আসনে লড়ছে বিজেপি! বারাবনির ১১৮টি, জামুড়িয়ার ১১২টি, দুর্গাপুর-ফরিদপুরের ১১০টি, কাঁকসার ১৬৪টি এবং পাণ্ডবেশ্বরের ১৩৪টি সংসদের মধ্যে বিজেপি লড়ছে যথাক্রমে ৩১টি, ৩২টি, ৪৯টি, ৫৮টি, ৬৮টিতে।
বিজেপি সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এই পাঁচটি ব্লকের বেশির ভাগ মণ্ডলেই ২০২২-এর শেষে দলের কার্যকারিণী বৈঠক করা যায়নি। দলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের দাবি, বৈঠক করা যাচ্ছে না দেখার পরেই এই এলাকাগুলিতে বাড়তি জোর দিতে হত নেতৃত্বকে। পাশাপাশি, কর্মীদের পাশেও সক্রিয় ভাবে দাঁড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু সেটা কতটা বিজেপি নেতৃত্ব করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।
যদিও, বিষয়টিকে আমল দিচ্ছেন না বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যই এই হাল। কিন্তু তার পরেও, যাঁরা প্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের মনোবল ভাঙা সম্ভব নয়। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে ওঁরা জিতবেনও।” সন্ত্রাসের অভিযোগে আমল দেননি তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পায়নি। এর থেকেই প্রমাণিত মানুষ ওঁদের সঙ্গে নেই। এখন সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ করে হালে পানি পেতে চাইছেন ওঁরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy