১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
ফাটল বোমা। চলল গুলি। মাথা ফাটল বিরোধী প্রার্থীর। এমন নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই শনিবার কাটল আসানসোল পুরভোট। আর তা উপলক্ষে দিনভর তেতে রইল পুর-এলাকার নানা প্রান্ত।
‘আক্রান্ত’ প্রার্থীরাআসানসোল উত্তর থানা এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী আদর্শ শর্মার স্কুটার কেড়ে, তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী চৈতালি তিওয়ারি দৃশ্যত কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেন, “আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। হেনস্থা করা হয়েছে।” এ বিষয়ে বিজেপি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানিয়েছে। পাশাপাশি, বুথ-‘দখল’ রুখতে গেলে, তাঁকে তৃণমূলের লোকজন ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী জারিনা খাতুন। রানিগঞ্জের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুরমাপাড়ায় সিপিএম প্রার্থী সঞ্জয় প্রামাণিককে, বার্নপুরের ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মিনা কর্মকার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা দাসকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। সঞ্জয়কে হাসপাতালে ভর্তিও করাতে হয়। সঞ্জয় হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলেন, “আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের লোকজন আমাকে হুমকি দেয়, ‘লাশ গিরা দেঙ্গে’ (লাশ ফেলে দেব)। রিভলভার বার করে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমি রিভলভার সরাতে গেলে, ওরা আঙুল ভেঙে দেয়। স্থানীয় মানুষজন আমাকে বাঁচিয়েছেন।” শুক্রবার রাতে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে, মহিশীলায় তাঁদের এক সমর্থককে মারধর করেছে তৃণমূল, অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল নেতা ভি শিবদাসন বলেন, “বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন।”
গুলি-বোমা-ভাঙচুর ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বরাকর মাড়োয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বুথ দখল করতে চেয়ে একটি বোমা ফাটায় তৃণমূল, অভিযোগ নাগরিকদের একাংশের। বিজেপি ও সিপিএমের অভিযোগ, ধাদকা এনসি লাহিড়ী স্কুলের বুথের বাইরেও কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। জামুড়িয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী দয়াময় বাউড়ির অভিযোগ, শনিবার বেলা ১১টার কিছু পরে, শ্রীপুরে বুথের বাইরে জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহের ছেলে প্রেমপালের নেতৃত্বে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার সময় ‘ফেসবুক লাইভ’ (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) করেন দয়াময়ের মেয়ে লিপি দাস। সে সময় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বাইরে থেকে গাড়ি করে লোক আনা হয়েছে। গুলি চালানো হচ্ছে’। যদিও হরেরামের প্রতিক্রিয়া, “ভিত্তিহীন অভিযোগ।” পাশাপাশি, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল তাদের ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ করে সিপিএম। অভিযোগ মানেনি
শাসক দল।
হাতাহাতি-প্রতিবাদআসানসোলে তৃণমূল ভোট-লুট করেছে, এই অভিযোগে শনিবার ২ নম্বর জাতীয় সড়কে অন্ডালের কাজোড়া মোড় ও দুর্গাপুরে গান্ধী মোড়ে সিপিএম অবরোধ করে। সিপিএম নেতা তুফান মণ্ডলের অভিযোগ, “মানুষের উপরে আস্থা নেই তৃণমূলের। তাই লুটের ভোটে পুরসভা দখল করতে চায় তারা।” অভিযোগ উড়িয়ে অন্ডাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীপদ মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “হার নিশ্চিত জেনে নাটক করছে সিপিএম।” ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথের বাইরে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি বাধে। কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দিতে হয় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। সেখানে এসে এসিপি (সেন্ট্রাল) মানবেন্দ্র দাসের নেতৃত্বে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আসানসোলের ২৭, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও দু’পক্ষে হাতাহাতি বাধে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “বিরোধী প্রার্থীদেরও রেয়াত করছে না শাসক দল। আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করল তৃণমূল।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীরও বলেন, “তৃণমূলের নিজেদের সংগঠনের প্রতি, জনতার প্রতি বিশ্বাস নেই। তাই ওরা ভোট লুট করে জিততে চাইল।” যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সর্বত্র সুষ্ঠু ভাবেই ভোট হয়েছে। বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ যদিও পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম বলেন, “দু’-একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া, ভোট মোটের উপরে নির্বিঘ্নেই হয়েছে। পুলিশ অত্যন্ত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে।” মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক অভিজ্ঞান পাঁজাও বলেন, “ভোট সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে। প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy