ল্যাংচা হাব সুনসান। নিজস্ব চিত্র
মিষ্টিমুখ না হলে নববর্ষ বেমানান ঠেকে অনেকের কাছেই। ‘লকডাউন’ চলায় বছরের প্রথম দিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত মিষ্টি ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতাদের দেখা সে ভাবে মিলল না। টানা ‘লকডাউন’-এর জেরে মাসখানেক ধরে বন্ধ শক্তিগড়ের ল্যাংচা-ব্যবসাও।
কালনার এক মিষ্টি ব্যবসায়ী রণজিৎ মোদক জানান, অন্য বার এই দিনে লাড্ডু, বোঁদে, মিহিদানা, পান্তুয়া, রসগোল্লা, সীতাভোগে, গজার মতো মিষ্টির জোগান দিতে হিমসিম খেয়ে যেতে হয়। শুধু লাড্ডুই গড়তে হয় ৫০ হাজারের বেশি। দিন সাতেক আগে থেকে রাত দিন জেগে কারখানায় কাজ করতে হয় কারিগরদের। কিন্তু এ বার বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই হালখাতা করেননি। ফলে, মিষ্টির বরাতও দেননি। সাধারণ মানুষও কেনাকাটা করেছেন অনেক কম। নিভুজিমোড় এলাকার ব্যবসায়ী দেবরাজ বারুইয়ের কথায়, ‘‘লকডাউনের জেরে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে, বিশেষ দিনে দোকানে যা বিক্রি হয় এ বার তার অর্ধেকও হয়নি।’’
কাটোয়াতেও মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বাজার মন্দা। কোনও মিষ্টির দোকানই প্যাকেটের বরাত পায়নি এ বার। ব্যবসায়ীদের দাবি, শহর, গ্রামের বরাত মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা কারবার হয় এই সময়। এ বার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র কাটোয়া শহরেই ৭০টির মতো ছোট-বড় মিষ্টির দোকান রয়েছে। পয়লা বৈশাখে এক-একটি মিষ্টির দোকানদার গড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার অর্ডার পান। চাহিদা বেশি থাকায় অনেকেই বরাত ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়। কাটোয়ার এক প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী প্রবীর মোদক বলেন, ‘‘অন্য বছর আমরা এমন দিনে নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতাম না। কিন্তু, এ বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের জেরে কোনও অর্ডার পাইনি।’’
শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ, আসানসোল, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, এমনকি, ঝাড়খণ্ড বা বিহারে যাতায়াতের পথেও প্রতিদিন শয়ে-শয়ে গাড়ি দাঁড়ায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পরপর সাজানো ল্যাংচার দোকানে। দূরপাল্লার বাসগুলিও এখানে বিরতি দেয়। খাওয়াদাওয়া করে এখান থেকেই বাড়ি বা প্রিয়জনের জন্য ল্যাংচা নিয়ে যান মানুষ। তবে আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর ছাড় দেওয়া চার ঘণ্টাতেও খুলছে না ল্যাংচার দোকান। ব্যবসায়ীদের দাবি, মানুষেরই যাতায়াত নেই, মিষ্টি কিনবে কে!
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সময়ে বাইরে থেকে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। কয়েক লক্ষ টাকার ব্যবসা হয় ওই সময়ে। এ বার উৎসব বাতিল হওয়ায় ব্যবসা মার খায়। তারপরে ‘জনতা কার্ফু’ এবং দেশ জুড়ে ‘লকডাউন’। যাত্রীবোঝাই বাস, গাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থমকে যায় ব্যবসা। স্থানীয় ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, ‘‘জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচলের উপরেই আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে। গাড়ি না চললে দোকান খোলা বৃথা। এখন ব্যবসা চালানো তো দূর, কর্মীদের বেতনের টাকা তোলাও মুশকিলের।’’
তবে এর মধ্যেই ব্যবসা বাঁচাতে বিকল্প পথ নিয়েছেন ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। উদ্যোগ করা হয়েছে ‘হোম ডেলিভারি’র। বেশ কয়েকটি দোকান ‘সোশ্যাল মিডিয়ায়’ বাড়িতে ল্যাংচা পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তেমন সাড়া পেলে বরাত অনুযায়ী মিষ্টি বানিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। ‘শক্তিগড় ল্যাংচা উন্নয়ন সমিতি’র সম্পাদক বাবুল মণ্ডল বলেন, ‘‘মাসখানেক ধরে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমরা বিকল্প পথ নিতে বাধ্য হচ্ছি।’’
একই হাল বর্ধমান শহরেও। শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ মিষ্টির দোকান বন্ধ। যে দোকানগুলি খুলছে তাঁদেরও দাবি, বাজার খারাপ। বর্ধমান পুরসভার পাশের মিষ্টির দোকানের মালিক প্রসেনজিৎ দত্ত, বিসি রোড রানিগঞ্জ চৌমাথার কাছের দোকান মালিক দীনবন্ধু নাগেরা জানান, রসগোল্লা, লাড্ডুর মতো মিষ্টি খুব কম পরিমাণে তৈরি করছেন তাঁরা। কারণ, দুপুরে দোকান খোলা থাকলেও কেউ মিষ্টি কিনতে আসছেন না। বর্ধমান স্টেশন এলাকার এক ব্যবসায়ী প্রমোদ সিংহ বলেন, ‘‘নববর্ষ, বিয়েবাড়ির সমস্ত বরাত বাতিল হয়ে গিয়েছে। এখন প্রতিদিন দোকান খুলেও মাছি তাড়াচ্ছি।’’ বর্ধমানের মিষ্টি ব্যসবায়ী সমিতির এক পদাধিকারী সৌমেন দাসের দাবি, দোকান খোলার সময় বদলানো গেলে হয়তো ব্যবসা ফিরতে পারে। সকালে দু’ঘণ্টা এবং বিকালে দু’ঘণ্টা করে দোকান খোলার আবেদন জানিয়ে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘সরকার মানুষের ভাল চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতেও সব দিক ভেবেই পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy