বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
তিন সপ্তাহ আগে স্নাতকস্তরের ষষ্ঠ সিমেস্টার ও স্নাতকোত্তর স্তরের চতুর্থ সিমেস্টারের ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু পড়ুয়াদের হাতে এখনও মার্কশিট পৌঁছে দিতে পারেনি পরীক্ষা নিয়ামক দফতর। তবে এমন ঘটনা প্রথম নয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনলাইনে ফল প্রকাশের পরে বার বার নির্দিষ্ট সময়ের পেরিয়ে কেন মার্কশিট পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ছাত্র সংগঠন থেকে শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরো পরীক্ষা পদ্ধতি ‘ডিজ়িটালাইজ়ড’ করতে একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তির বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট বিভাগ প্রশ্ন তোলায় পাওনা কয়েক কোটি টাকা আটকে রয়েছে ওই সংস্থার। ওই সংস্থা কাজে ঢিলেমি করায় মার্কশিট দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ামক দফতর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই বহুজাতিক সংস্থা নিয়ম মেনে দরপত্র ডেকে সবচেয়ে কম টাকায় কাজ করার শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়। দু’বছর কাজ করার পরে বিল দিতেই নানা প্রশ্ন ওঠে। অডিট বিভাগ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দীর্ঘ দিন বিল আটকে রাখে। তারপর থেকেই কাজে ঢিলে হয়ে পড়ে ওই সংস্থা। বার বার তাগাদা দিয়েও টাকা না পেয়ে প্রায় এক মাস কাজ বন্ধ রাখে। তখন উচ্চ শিক্ষা দফতর ও সরকারের অনুমোদিত একটি অডিট সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী অস্থায়ী উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ এগজ়িকিউটিভ কমিটিতে (ইসি) ওই বিল পেশ করেন। জানা যায়, আচার্যের ‘নির্দেশ’ অনুযায়ী বকেয়া টাকা দিতে বলা হয় ইসিতে। বিলের একাংশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আচার্যের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ইসি বৈঠকে তা সংশোধন করে আচার্যের ‘মৌখিক নির্দেশ’ বলে জানানো হয় বিষয়টিকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে অস্থায়ী উপাচার্য গৌতম চন্দ্র ওই সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা জানায়, বকেয়া ও বর্তমান মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। উপাচার্য বেশ কিছু প্রশ্ন তোলায় সংস্থার তরফে জানানো হয়, এ সব চুক্তিতে নেই। কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই কথোপকথনেই বোঝা যায়, চুক্তিতে গোলমাল থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। মার্কশিট এক জায়গায় তৈরি আর অন্য জায়গায় ছাপানোয় একই কাজের জন্যে দু’বার খরচ হচ্ছে। চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। উপাচার্য বলেন, ‘‘দু’জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা চুক্তির বিষয়বস্তু খুঁটিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেবেন। সেই রিপোর্ট দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘আমরা এখন ওই সংস্থার দয়ার পাত্র। কোনও কারণে কাজ বন্ধ করে দিলে পরীক্ষা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪টি কলেজ ছড়িয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও বীরভূমে। স্নাতকস্তরে সব মিলিয়ে আড়াই লক্ষ ও স্নাতকোত্তরে সাড়ে ছ’হাজারের মতো পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ কেন বেসরকারি সংস্থার হাতে পড়ে থাকবে, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তিন মাস আগে স্নাতকস্তরের ষষ্ঠ সিমেস্টারের ফল প্রকাশ হলেও মার্কশিট না মেলা নিয়ে সব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (বুটা)। সংগঠনের নেতা ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘‘বার বার একই সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ছেন। এই সমস্যা দ্রুত মেটানো উচিত।’’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই মার্কশিট পাওয়া নিয়ে পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা থাকে। আবার মার্কশিট পাওয়ার পরেও নানা ভুল থাকে।’’ টিএমসিপির রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক খোন্দেকার আমিরুল ইসলামের (রামিজ) বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেন পরীক্ষার্থীরা ভুগবেন? দ্রুত সমাধানের পথ না বার হলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’’
পরীক্ষা নিয়ামক অনিন্দজ্যোতি পালের আশ্বাস, ‘‘অনলাইন মার্কশিট (সফট কপি) দেখিয়েই ভর্তি হচ্ছেন সবাই। কোনও পরীক্ষার্থীর অসুবিধা হয়নি। হার্ড কপি পরীক্ষার্থীরা দ্রুত পেয়ে যাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy