‘গুরুতর নৈতিক অবক্ষয়ের’ কারণ দেখিয়ে প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে সিপিএম। তার পরেই দলের বিরুদ্ধে সরব হলেন বংশগোপাল।
১৯৮৭ সালে, ২৬ বছর বয়সে প্রথম রানিগঞ্জের বিধায়ক হন বংশগোপাল। ২০০৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বিধায়ক ছিলেন। তার মধ্যে রাজ্যের একাধিক দফতরের মন্ত্রী হন। ২০০৫ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংসদ হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। ২০১১ পর্যন্ত আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। এখন তিনি সিটুর
পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং সিটু অনুমোদিত ইসিএলের খনিকর্মীদের সংগঠন সিএমএসআই-এর সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এই
ঘটনার পরে তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করছেন কি না, সে প্রশ্নে সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু রবিবার
বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। জেলা স্তরে আলোচনা
হওয়ার পরে রাজ্য কমিটি দেখবে।’’
বংশগোপাল এ দিন পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে না জানিয়ে কীভাবে গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা প্রকাশ হয়ে গেল?
তাঁর দাবি, ‘‘দলে যে নৈতিকতা দেখেছিলাম, আজ সেটা নেই।’’ তাঁর আরও দাবি, তিনি জেলা কমিটির সদস্যপদ ছাড়ার ইচ্ছের কথা সম্প্রতি দলের ওয়টস্যাপ গ্রুপে লিখেছিলেন। তখন রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চান। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও জানান। কিন্তু এরই মধ্যে শনিবার গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমে তাঁকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
দলের একাংশের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন বংশগোপাল। সে প্রসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন এক জন বেআইনি সম্পত্তি বাঁচাতে তাঁর সহায়তা চাইলেও তিনি
করেননি। আবার, পশ্চিম বর্ধমানে দলের একাংশ অনৈতিক ভাবে বিজেপির সঙ্গে কাজ করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। সে সবের কারণেই দলের অন্দরে শত্রু তৈরি হয়েছিল, দাবি বংশগোপালের। তাঁর দাবি, ‘‘এর আগেও আলিমুদ্দিনে এক মহিলাকে পাঠানো হয়েছিল। দলের নেতৃত্ব সব খতিয়ে দেখে বুঝেছিলেন, মিথ্যা অভিযোগ। ওই ষড়যন্ত্র কলকাতার যে যুবক করেছিলেন,
তিনি পশ্চিম বর্ধমানে রমরমিয়ে
কারবার চালাচ্ছেন। দল সব জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ বংশগোপালের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলও আমার সঙ্গে এত নোংরামি করেনি। বিজেপির সঙ্গে কারা সমঝোতা করে চলতে চাইছেন,
তাঁদের চিহ্নিত করার কাজও
দলের। এটাও নৈতিকতার প্রশ্নেই প্রয়োজন।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি
নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া,
‘‘এটা ওঁদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে কিছু না বলাই ভাল। তবে সিপিএমের সংগঠন তো তলানিতে ঠেকেছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সিপিএমের দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে সিপিএমের সঙ্গে বিজেপির যে সম্পর্কের কথা বংশগোপাল বলেছেন, সেটা আমরা ২০১৪ সাল থেকে বলে আসছি। সেটাই প্রমাণ হল।’’
বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যের যদিও দাবি, ‘‘তৃণমূল ও সিপিএম ভোটের সময়ে একটাই স্লোগান দেয়, বিজেপিকে কোনও ভোট নয়। এখন নিজের দল ওঁর (বংশগোপাল) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এ সব বলছেন।’’ আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বক্তব্য, ‘‘সিপিএম নারীর সুরক্ষা নিয়ে কথা বলে। কিন্তু ওদের মুখ আর মুখোশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনেক দিন আগেই বুঝে গিয়েছেন। তাই ওরা আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।’’
কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বংশগোপাল দক্ষ শ্রমিক নেতা। শাস্তির বিষয়টি তাঁদের দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে দলের
পথ ধরে শ্রমিক সংগঠনও তাঁকে বহিষ্কার করলে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষতি হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)