বর্ধমান রেলস্টেশন। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি, নাম বদলের প্রস্তাব শোনা যেতেই আপত্তি উঠেছে শহর জুড়ে।
বর্ধমান স্টেশনের নাম বদলে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার প্রস্তাব রেলমন্ত্রীর কাছে আগেই দিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে পটনার বাসিন্দা ভারতী দত্ত বাগচি। তাঁর দাবি, ২০ জুলাই বিপ্লবীর মৃত্যুদিনে পটনার বাড়িতে তাঁকে সম্মান জানাতে এসে ওই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিহারের বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ রাই। যদিও এ রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদের দাবি, এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নাম বদলের বিরোধিতা করেছেন জেলার নানা স্তরের, সম্প্রদায়ের মানষজনও।
রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “মহান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের জন্মস্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেখানে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্ধমান স্টেশনের নাম পাল্টে তাঁর নামে করা হবে, এমন সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে জানি না।’’ একই সুর বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার কথাতেও। তিনি বলেন, “বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে কোনও স্তরেই আলোচনা হয়নি।’’
কেউ মনে করেন, জনপদ ক্রমবর্ধমান ছিল বলেই এ জেলার নাম হয় বর্ধমান। কেউ বা বলেন, জৈন ধর্মগুরু মহাবীর বর্ধমান এই রাঢ়দেশে পরিভ্রমণে আসায় তাঁর নামেই এই জনপদের নামকরণ। তবে নামের উৎপত্তির কারণ যাই হোক না কেন, তা বদলে ফেলা মানে ঐতিহ্য, ইতিহাস মুছে যাওয়া দাবি করছেন শহরবাসী।
ইতিহাসবিদ গিরিধারী সরকার বলেন, “মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ বর্ধমান স্টেশনের নামকরণ করেছিলেন। তাঁর জায়গাতেই রেল স্টেশন গড়ে উঠেছে। বর্ধমান নামের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। সেই নাম বদল মানে ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা।’’
বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক রাজ সিংহ ভুতুরিয়ারও দাবি, “ভগবান মহাবীরের নাম অনুসারে বর্ধমানের নাম রাখা হয়েছিল, এটা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য। এখন কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাম পরিবর্তন করে দিতে হবে বললে, আমরা মানব না। আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা হবে, এটা আমরা চাইছি না। প্রয়োজনে আদালতে যাব।’’
বটুকেশ্বর দত্তের মতো অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক বর্ধমানের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁদের পরিবারের তরফেও বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার দাবি তুললে কী করবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন শহরের অনেকে। মেমারির একটি স্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমি মুখোপাধ্যায়, রাজ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যদের প্রস্তাব, বটুকেশ্বর দত্তের জন্মস্থান খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে। ওই এলাকা দিয়ে গিয়েছে বর্ধমান-বাঁকুড়া রেলপথ। কোনও স্টেশনের নাম যদি বদলাতেই হয়, তাহলে ওই লাইনের কোনও স্টেশনের নাম বিপ্লবীর নামে রাখা যেতে পারে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউরেটর রঙ্গন জানার দাবি, “এই ভাবে নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত ভুল। স্টেশনের নাম হয়ে গেলে বিপ্লবীর সম্পর্কে অনেকে জানতে চাইবেন, সেটা তো জানানো হবে না। তার চেয়ে বিপ্লবীর সংগ্রামী-জীবন প্রচার করলে তাঁকে অনেক বেশি সম্মানিত করা হবে।’’
তবে দাবি মান্যতা পাওয়ায় খুশি বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক মধুসূদন চন্দ্র। তাঁর দাবি, “২০১২ সাল থেকে আমরা এই দাবি করছি। রেল সেই দাবিকে মান্যতা দিতে চাওয়ায় আমাদের ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy