Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Murder

সঞ্জিত সংগঠন বাড়াতেই খুন, দাবি তৃণমূলের

ভোট এগিয়ে আসতেই ফের তপ্ত মঙ্গলকোট। নিগনে তৃণমূল নেতাকে খুনে নাম জড়াল বিজেপির।

নিহতের বাড়িতে তৃণমূল নেতারা। —নিজস্ব চিত্র

নিহতের বাড়িতে তৃণমূল নেতারা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৩
Share: Save:

ভোট এগিয়ে আসতেই ফের তপ্ত মঙ্গলকোট। নিগনে তৃণমূল নেতাকে খুনে নাম জড়াল বিজেপির।

নিগনের একাংশে দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাব রয়েছে বিজেপির। গত লোকসভা ভোটে গ্রামের ছ’টি বুথের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়েছিল তারা। বিধানসভা ভোটের আগে বুথ সভাপতি সঞ্জিত ঘোষ (৩৮) গ্রামে দলের ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করার জন্যই বিজেপির লোকজন তাঁকে খুন করল, এমনই অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, মাস দু’য়েক আগে এলাকায় পতাকা টাঙানো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির ঝামেলা বাধে। তৃণমূলের সঞ্জিত ও বিজেপির বুথ সভাপতি অথান মাঝি বিবাদে জড়ান। তখন থেকেই দু’পক্ষের গোলমাল চলছিল। ১৯৯৪-এর ২৫ জানুয়ারি এলাকায় বেশ কিছু বিজেপি কর্মীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। তখন থেকে দিনটি ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালন করে বিজেপি। এ বার ওই দিনে সভা করতে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তার পর থেকে পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয় বলে দাবি তৃণমূলের।

মঙ্গলবার সঞ্জিতের সঙ্গে থাকা তৃণমূল কর্মী ইব্রাহিম খান জানান, তাঁরা কৈচরে দলের কার্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনে গিয়েছিলেন। দুপুরে আলাদা বাইকে ফিরছিলেন। তিনি সঞ্জিতের কিছুটা পিছনে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, গ্রামে ঢোকার মুখে কালভার্টের কাছে সঞ্জিতের চিৎকার শুনতে পান। দেখেন, কয়েকজন মিলে মারধর করছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এগোতেই জনা পাঁচেক এসে আমাকেও মারতে শুরু করে। কোনওমতে বাইকটা টেনে বার করে কৈচর ফাঁড়িতে গিয়ে খবর দিই।’’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সঞ্জিতকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে প্রায় তিন ঘণ্টা কার্যত কোনও চিকিৎসা হয়নি। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বর্ধমানে ‘রেফার’ করা হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পথে রাস্তায় মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ক্ষত মেলেনি। তৃণমূলের নিগন অঞ্চল সভাপতি ধ্রুব ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘সম্ভবত নানা পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল। সেই পরিকাঠামো হয়তো কাটোয়ায় ছিল না। তাই চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে থাকতে পারে।’’ জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতেই হাসপাতালে যান দলের নেতা উত্তম সেনগুপ্ত, বাগবুল ইসলাম, যুব নেতা রাসবিহারী হালদারেরা। নিহতের বাবা সাগর ঘোষের অভিযোগ, ‘‘অনেকদিন ধরেই আমার ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা ছিল। চক্রান্ত করে বিজেপি নেতা শিশির ঘোষের নেতৃত্বে খুন করা হয়েছে।’’ ময়না-তদন্তের পরে এ দিন বিকেলে দেহ গ্রামে পৌঁছতেই তৃণমূল কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তদন্তের পরিস্থিতি দেখতে কৈচর ফাঁড়িতে আসেন জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখ্যোপাধ্যায়। গ্রামে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী এলাকায় বিজেপির প্রভাবের কথা মানতে চাননি। তবে মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শান্ত সরকারের দাবি, ‘‘পরম্পরাগত ভাবে নিগনের একাংশ বিজেপির প্রভাব রয়েছে। সেখানকারই বুথ সভাপতি ছিলেন সঞ্জিত। বিজেপির প্রভাব কাটিয়ে তৃণমূল এগোচ্ছিল। পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।’’ এ দিন বীরভূমের দুবরাজপুরে দলের সভায় তৃণমূলের মঙ্গলকোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘সভা থাকায় আমি আজ যেতে পারিনি। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে পাঠিয়েছি। শুক্রবার ওখানে যাব। আমার সঙ্গে দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা হয়েছে।’’

বিজেপির রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ সৌমিত্রের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই এই ঘটনা ঘটেছে। রাজুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ ঠিক ভাবে তদন্ত করলেই সত্য জানা যাবে। রাজ্য জুড়ে আমাদেরও ১৩৫ জন খুন হয়েছেন।’’ জেলা (কাটোয়া) বিজেপি সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘কিছু দিন আগেই সঞ্জিত আমাদের কর্মী অথানকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছিল। তৃণমূল নেতারা গ্রামে লাগাতার হুমকি দিচ্ছে। এখন আমাদের কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।’’ এ দিন অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের বাড়ি গিয়ে কারও দেখা মেলেনি।

দুই ছেলেকে নিয়ে শোকস্তব্ধ সঞ্জিতের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

দুই ছেলেকে নিয়ে শোকস্তব্ধ সঞ্জিতের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy