গ্রামবাসীর ‘হামলা’য় ভেঙেছে বাড়ির জানলা। নিজস্ব চিত্র
এক ব্যক্তির ‘করোনা পজ়িটিভ’ রিপোর্ট আসায় তাঁকে ‘সেফ হোম’-এ পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ওই ব্যক্তি না কি করোনা আক্রান্তই হননি!— এমনই দাবি করে গ্রামবাসীর একাংশের বিরুদ্ধে সোম ও মঙ্গলবার দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী, এক আশাকর্মী এবং এক ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’-এর বাড়িতে হামলার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের ভরতপুর গ্রামের ঘটনা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভরতপুরের এক মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই মতো ভরতপুরের বাউড়িপাড়ার এক ব্যক্তি-সহ মহিলার সংস্পর্শে আসা কয়েকজনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করায় স্বাস্থ্য দফতর। ওই ব্যক্তির ২৯ জুলাই কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় খেতমজুর উপসর্গহীন ওই ব্যক্তির রিপোর্ট ‘কোভিড পজ়িটিভ’ আসার পরে, তাঁকে পূর্ব বর্ধমানের এক জায়গায় ‘সেফ হোম’-এ রাখা হয়। সেখান থেকে সোমবার তাঁকে বাড়িতে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি গ্রামে ফেরার পরেই শুরু হয় গোলমাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করতে থাকেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে ‘করোনা পজ়িটিভ’ বলে ‘সেফ হোমে’ পাঠালেও, ওই ব্যক্তি আদৌ করোনা আক্রান্ত হননি। ফলে, ওই ব্যক্তিকে ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী।
অভিযোগ, এর পরেই গ্রামবাসীর একাংশ ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ভরতপুর গ্রামের এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর (এএনএম) বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী সেই সময়ে বাড়িতে একাই ছিলেন। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর অভিযোগ, ‘‘গালিগালাজ করা হচ্ছিল। বিক্ষোভকারীরা রাত ৯টা নাগাদ বাড়ির গাড়ি ও মোটরবাইক ভাঙচুর করেন। ঘরের জানলা-দরজা ভাঙতে শুরু করেন। এই মুহূর্তে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় গ্রাম ছেড়ে, মেয়ের বাড়িতে রয়েছি।’’ ওই স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আরও অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময়ে বুদবুদ থানার পুলিশকর্মীরা এলাকায় থাকলেও, চলে ভাঙচুর। রাত ১১টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা এলাকা ছাড়েন।
একই ‘কারণে’ মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামেরই আরও এক স্বাস্থ্যকর্মী (এএনএম), এক জন ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’ এবং এক আশাকর্মীর বাড়িতেও গ্রামবাসীর একাংশ ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। তাঁদের বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় জানলা-দরজায়। ‘আক্রান্তেরা’ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু ওই গ্রামবাসী কী করে ‘বুঝলেন’ ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত নন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ‘‘ওই লোকটি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। করোনা থাকলে কিছু তো বোঝা যেত!’’ কিন্তু কী ভাবে ‘বোঝা যেত’, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি যাঁকে ‘সেফ হোম’-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই ব্যক্তির সঙ্গেও।
‘আক্রান্ত’ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্ষেপ, ‘‘এলাকাবাসীর সচেতনতার অভাব রয়েছে। বলার চেষ্টা করি, উপসর্গ না থাকলেও করোনা হতে পারে। কিন্তু গ্রামবাসী বুঝতে চাননি। আমরা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো কাজ করি। সেই কাজ করতে গিয়ে এ ভাবে হামলা হলে করোনা-পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’ বিএমওএইচ (গলসি ১) ফারুক হোসেনের ক্ষোভ, ‘‘বুদবুদ থানায় এই ঘটনার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এ ভাবে হামলা হলে এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়বে।’’ সিএমওএইচ (পূর্ব বর্ধমান) প্রণব রায় বলেন, ‘‘এমন হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছি।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) শাশ্বতী শ্বেতা সামন্ত বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ পাশাপাশি, পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীর ‘তেতে’ ওঠার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy