কোলাহলপূর্ণ শহর আসানসোল প্রতীকী ছবি
বিশ্বের সব থেকে কোলাহলপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে রয়েছে, রাজ্যের দু’টি শহর, কলকাতা ও আসানসোল। বিশ্বের ১৪তম স্থানে রয়েছে শহর দু’টি। সম্প্রতি ‘ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’ (ইউএনইপি) প্রকাশিত ‘অ্যানুয়াল ফ্রন্টিয়ার রিপোর্ট ২০২২’-এ এই তথ্য সামনে এসেছে। এই তথ্য সামনে আসার পরেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহরের চিকিৎসকদের একাংশ।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, আসানসোল ও কলকাতা, এই দুই শহরেরই শব্দের মাত্রা ৮৯ ডেসিবেল। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকা (১১৯ ডেসিবেল)। তালিকার দ্বিতীয় এবং ভারতের শীর্ষে রয়েছে মোরাদাবাদ শহরটি (১১৪ ডেসিবেল)। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মতো বসতি এলাকায় অনুমতি যোগ্য শব্দমাত্রা থাকা উচিত, ৫৫ ডেসিবেলের মধ্যে। বাণিজ্যিক এলাকায় এই মাত্রা ৭০ ডেসিবেল। পাশাপাশি, শব্দ-আইন অনুযায়ী, শিল্পক্ষেত্রে দিনে ও রাতে নির্ধারিত শব্দমাত্রা যথাক্রমে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ও রাতে তা যথাক্রমে ৬৫ এবং ৫৫ ডেসিবেল। বসতি এলাকায় দিনে ও রাতে নির্ধারিত শব্দমাত্রা যথাক্রমে, ৫৫ ও ৪৫ এবং ‘সাইলেন্ট জ়োন’-এ তা যথাক্রমে ৫০ এবং ৪০ ডেসিবেল।
ওই রিপোর্টে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, জানানো হয়েছে, মূলত শহরাঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থা, শিল্পাঞ্চলের উপস্থিতি, যন্ত্রপাতির ব্যবহার, মনোরঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত নানাবিধ উপকরণের উপরে ভিত্তি করে শব্দ দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
রিপোর্টের কথা সামনে আসার পরেই চিন্তায় চিকিৎসকদের একাংশ। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ হলে বধিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা দরকার।” আসানসোলের ইএসআই হাসপাতালের সুপার এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অতনু ভদ্র বিষয়টি জানার পরে বলেন, “শব্দ দূষণের ফলে শিশুরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের কথা ভেবেও এই দূষণ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।”
কিন্তু কেন এই হাল? নাগরিকদের একাংশের মতে, বছরের নানা সময়ে, তা সে পিকনিক করতে যাওয়া হোক বা উৎসবের মরসুম— সর্বদা দেখা যায়, ডিজ়ে-তাণ্ডব। শব্দবাজি ফাটানোর ঘটনাও নতুন নয়। চিকিৎসকদের মতে, ডিজের তাণ্ডবে হৃদযন্ত্র পর্যন্ত বিকল হতে পারে। সে সঙ্গে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল শাখার এক আধিকারিক এ-ও জানিয়েছেন, কোনও কারণ ছাড়া গাড়ি, মোটরবাইকের হর্ন বাজানো, ট্র্যাফিক সিগনালে গাড়ির স্ট্রার্ট বন্ধ না করার মতো বিষয়গুলির জন্যও আসানসোলে বাড়ছে শব্দ যন্ত্রণা।
পরিস্থিতির সামাল দিতে কিছু পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। তিনি জানান, শব্দ দূষণ রোধে লোকসভা উপনির্বাচনের পরে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, শব্দ দূষণের মাত্রা বুঝতে আসানসোলে মহকুমাশাসকের বাংলো লাগোয়া এলাকায় একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। আরও একটি যন্ত্র রানিগঞ্জে বসানো হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোলের এক আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, “দূষণ রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়।” তবে ‘সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড’-এর আসানসোলের নোডাল অফিসার দেবব্রত দাস বলেন, “ইউএনইপি-র এমন কোনও রিপোর্ট পাইনি। তাই কিছু বলা সম্ভব নয়।”
তবে, পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি পদমর্যাদার এক অফিসারের দাবি, ডিজ়ের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের আশ্বাস, “যে কোনও দূষণ রোধে পুরসভার পক্ষ থেকে সরকারি নির্দেশ মেনে অভিযান চালানো হয়। এ ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy