কুলটিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলকার। নিজস্ব চিত্র
পুলকার-অনিয়ম বন্ধে আসানসোলে মহকুমা (আসানসোল) পরিবহণ দফতর ও পুলিশ এবং দুর্গাপুরে পুলিশ বুধবার অভিযান চালিয়েছে। দুই শহরেই পুলকারগুলির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে বলেজানানো হয়।
পুলিশ ও দফতরের কর্তারা জানান, সম্প্রতি হুগলিতে পুলকার-দুর্ঘটনার পরে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার পুলকারগুলির অবস্থা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। এর পরেই পূর্ব ঘোষণা মতো এ দিন শুরু হয় অভিযান। এডিডিএ মাঠে সকাল থেকে পুলকার পরীক্ষা শুরু করেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (ট্র্যাফিক, আসানসোল) অজয় চট্টোপাধ্যায় ও পরিবহণ দফতরের দু’জন ইনস্পেক্টর। প্রায় দু’শোটি পুলকার পরীক্ষার শেষে জানানো হয়, নানা অনিয়মের কথা।
‘অনিয়ম’-এর মধ্যে রয়েছে— বাণিজ্যিক কাগজপত্র না থাকা, ব্যক্তিগত মালিকানার কাগজেই পুলকার চালানো, স্পিড লিমিট ডিটেক্টর (এসএলডি) না থাকা বা খারাপ হয়ে যাওয়া, চালকের বৈধ লাইসেন্স না থাকা প্রভৃতি। পাশাপাশি, চালকদের কাছে সংশ্লিষ্ট পুলকারের মালিকের কোনও ‘অথরাইজেশন’ না থাকা, গাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও বাক্স না থাকা, কোনও গাড়ির চাকা চলাচলের উপযুক্ত নয় বলেও জানানো হয়।
দফতরের কর্তারা জানান, প্রতিটি গাড়ির ‘ত্রুটি’ বা ‘অনিয়ম’, চালক এবং মালিকের ঠিকানা-সহ একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, পুলকারগুলিতে নিয়ম মেনে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখতে আচমকা অভিযানও চালানো হবে।
পাশাপাশি, কুলটির কুলতড়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে গিয়ে পুলকার পরীক্ষা করেন এসিপি (ট্র্যাফিক, কুলটি) সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, এসিপি (পশ্চিম) শান্তব্রত চন্দ ও পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টর জীবন্ত গুহ। তাঁরাও জানান, অনেক গাড়িরই বৈধ কাগজ নেই। এগুলির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সালানপুর থানার উদ্যোগে পুলকার পরীক্ষা করা হয় রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ি লাগোয়া একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে। সেখানেও বিস্তর গরমিল ধরা পড়ে।
দুর্গাপুরেও অভিযান চালিয়ে কিছু অনিয়ম নজরে পড়ে বলে পুলিশ জানায়। দুর্গাপুরে পুলকার-দুর্ঘটনা অতীতে বারবার ঘটেছে। গত ১৩ জানুয়ারি ডিএসপি টাউনশিপে পুলকার উল্টে জখম হয় প্রাথমিকের ১২ জন পড়ুয়া। পড়ুয়াদের দাবি, পুলকারের চালক পাশের আসনে বসা এক মহিলাকে গাড়ি চালাতে দেন। যদিও চালক ও ওই মহিলা অভিযোগ মানেননি। গত ২১ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাজারে মোটরবাইক আরোহী এক আনাজ বিক্রেতা পুলকারের ধাক্কায় জখম হয়ে মারা যান। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘এ দিন পুলকার চালকদের নানা অনিয়ম নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ধরা পড়লে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ পরিবহণ দফতর জানায়, পুলকার চালক ও মালিকদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করে নিয়ম মনে করানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন (দুর্গাপুর) সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পুলকার মালিক ও চালকদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুলকারের যাবতীয় তথ্য প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। ফের তাঁদের সময় দেওয়া হবে। তার পরেও নির্দেশ মানা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে, গত মঙ্গলবারই বার্নপুরেও এক পুলকার চালককে ‘মত্ত’ জানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন এলাকাবাসীর একাংশ।
এ দিন পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরাও। তবে তাঁদের অভিজ্ঞতা, আগেও অভিযান হয়েছে। ক’দিন কড়াকড়ি হলেও আখেরে লাভ হয় না। তবে জেলা পরিবহণ আধিকারিক পুলকরঞ্জন মুন্সী বলেন, ‘‘কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। নিয়ম মেনে পুলকার চালাতে হবে। না হলে পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রশাসনের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন আসানসোল পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হেমন্ত মণ্ডলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy