এই ঘরই ভাড়া নিয়ে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
ঘিঞ্জি বসতি এলাকা। নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বড় জোর পাঁচশো মিটার দূরে প্রায় দেড় বছর ধরে চলছিল অস্ত্র কারখানা। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের নাকের ডগায় কী ভাবে ওই কারখানা চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আসানসোল পুরসভার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের নুরনগরের বাসিন্দারা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে আরও বেশি নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (সংখ্যালঘু উন্নয়ন) মীর হাসিম বলেন, ‘‘এই ঘটনা থেকে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ পেয়েছে।’’ এলাকাবাসী রফত পারভেজের ক্ষোভ, ‘‘পুলিশের নজর এড়িয়ে কী ভাবে বসতি এলাকার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে? অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছি!’’
এই ঘটনায় ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছেন বলে দাবি ‘নিয়ামতপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সম্পাদক শচীন ভালোটিয়ার। পাশাপাশি, তিনি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করল, অথচ পুলিশ কিছুই জানতে পারল না!’’ যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সক্রিয়। পুলিশের নজরদারি অত্যন্ত ভাল ছিল বলেই ওই অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছে।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বহিরাগত কয়েকজন বাড়ি ভাড়া নেয়। ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা করা হবে, এই জানিয়ে ভাড়া নেওয়া হয়।
কেন গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার কথা বলে ভাড়া নেওয়া হয়? পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় স্টিলের আলমারি, কড়াই, গাড়ির যন্ত্রংশ তৈরির একাধিক কারখানা আছে। তাই একই জিনিসের নতুন একটি কারখানা হচ্ছে, এই ভেবে আর কেউ সন্দেহ করেননি।
এ দিকে, পুলিশ কমিশনার জানান, বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী-সহ ধৃত পাঁচ জন অভিযুক্তকে নিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ)। কমিশনার বলেন, ‘‘এই কারখানায় মূলত পিস্তলের অংশবিশেষ তৈরি হত।’’ কারখানাটি ‘সিল’ করা হয়েছে। বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত মহম্মদ ইসরার আহমেদ, মহম্মদ আরিফ, সূরজকুমার সাউ, ঊমেশ কুমার ও অরুণকুমার বর্মাদের শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ১২ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার জানান, পুরনো একটি মামলার সূত্রে টাস্ক ফোর্স এই অভিযান চালায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটও সঙ্গে ছিল। তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সওকত আনসারি নামে একজনকে জাল টাকা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এই মুহূর্তে সে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছে। তাকে জেলে গিয়ে জেরা করে কুলটির অস্ত্র কারখানার হদিস মেলে। এ দিন সওকতকেও আদালতে তোলা হয়। তাকেও পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy