উপরে, এই পুকুরে মেলে দেহ। নীচে, রক্তের দাগ। নিজস্ব চিত্র
বিকেল থেকে বারবার ফোন আসছিল। কিন্তু স্বামীকে ফোন ধরতে না দেখে খটকা লেগেছিল অনিতা মাঝির। সে কারণে স্বামীকে মাধবডিহি বাজারে তৃণমূলের অফিসে যেতে নিষেধও করেছিলেন তিনি। তার পরেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে বার হন অনিল মাঝি (৪৭)। বুধবার সকালে মাধবডিহির পূর্বপাড়ার বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে আদিবাসী পাড়া লাগোয়া সাঁইপুকুর থেকে মেলে তাঁর দেহ। অনিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকেরাই খুন করেছে আমার স্বামীকে।’’
বিজেপি অবশ্য তাঁর দাবি মানেনি। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, অনিলের ‘দাদাগিরির’ ভয়ে তাঁদের কর্মীরা বেশ কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যে বার হতে পারছেন না। তৃণমূলেরই নেতা খুনে জেল খাটার পরে, বিজেপির লোকেদের উপর হামলা চালাচ্ছিলেন তিনি। প্রকাশ্যে মারধর, হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ। বিজেপির খণ্ডঘোষের পর্যবেক্ষক বিজন মণ্ডলের দাবি, “অনিলের জন্য আমাদের লোকেরা তটস্থ ছিল। ওঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ করেছি।’’
তৃণমূলের নেতা তথা রায়না ২ পঞ্চায়ের সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ কলিমুদ্দিনের (বাপ্পা) যদিও দাবি, “যে জায়গায় আমাদের কর্মীকে খুন করা হয়েছে, ওটা বিজেপির ডেরা। আমরা নিশ্চিত রাতের অন্ধকারে পথ আটকে বিজেপিই খুন করেছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মোটরবাইক নিয়ে দিনভর ঘুরে বেড়াতেন অনিল। তাঁর ‘ভয়ে’ অনেকেই বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দিতেও শুরু করেছিল বলে জানান তাঁরা। নিহতের এক মেয়ে মৌসুমী সিংহের অভিযোগ, “পরিকল্পিত ভাবে বাবাকে খুন করা হয়েছে। এর পিছনে নিশ্চয় চেনা লোকেরা রয়েছে।’’ অনেকদিন ধরেই নিহতকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও তাঁদের অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, সে সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অনিলের চার মেয়ে ও ১৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। পূর্বপাড়ার ভিতর পৈতৃক ভিটেয় অ্যাসবেস্টসের চাল ও মাটির দেওয়াল তোলা একটি বাড়িতে থাকেন তাঁরা। প্রতিবেশীরা জানান, চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নাবালক ছেলে ভিন্-রাজ্যে কাজ করে। পরিজনদের দাবি, সারা দিন দল নিয়েই পড়ে থাকতেন অনিল। তাঁর বাড়ির ঠিক পিছনের পরপর দু’টি সরকারি প্রকল্পের ঘর তৈরি হলেও অনিল সে সুবিধে পাননি। নিহতের দিদি মেনকা মাঝি বলেন, “দল করতে গিয়ে ভাই সংসারে মন দেয়নি। নাবালক ছেলেকে নিয়ে এ বার অনিতাকে পথে বসতে হবে।’’ মৃতের মেয়েদের দাবি, “বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তির সঙ্গে ক্ষতিপূরণও চাইছি।’’
ওই পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি (পূর্ব বর্ধমান) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এ দিন তিনি বলেন, “দলের তরফে আমরা ওই কর্মীর পরিবারের পাশে থাকব। পুলিশকেও বলেছি, তদন্ত করে দ্রুত দোষীকে গ্রেফতার করতে হবে।’’ রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনসার আলি খানও প্রশাসনিক ভাবে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy