প্রতীকী ছবি।
গুজবের জেরে ফের ঘটল গণপিটুনির ঘটনা। বুধবার রাতে অণ্ডালের ছোড়া পঞ্চায়েতের শঙ্করপুর গ্রামে এক যুবককে আটকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। ওই দিন সকালেই সালানপুরের দেন্দুয়া রেলগেটের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে চোর ও ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় তাঁকে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এ নিয়ে জেলায় মোট পাঁচটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে শঙ্করপুরে অপরিচিত এক যুবককে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন কিছু লোকজন। তাঁদের দাবি, যুবকটি নাম-পরিচয় বলতে চাইছিলেন না। আরও লোকজন জড়ো হয়ে যায়। ছেলেধরা সন্দেহে ওই যুবককে মারধর শুরু হয়। খবর পেয়ে উখড়া ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে খান্দরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক জানিয়েছেন, তাঁর নাম ধনী রাম। বাড়ি ইলাহাবাদে। আর কোনও তথ্য এখনও তাঁর কাছ থেকে মেলেনি। মহকুমা হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস বৃহস্পতিবার জানান, আহতের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তাঁর মাথায় চোট রয়েছে। তা পরীক্ষা করার পরে আঘাত কতটা, তা ঠিক ভাবে বলা যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় ছেলেধরা ঘুরে বেড়ানোর গুজব ছড়াচ্ছে। শঙ্করপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সাকিনা খাতুন বলেন, “আতঙ্কে কয়েক দিন কেন্দ্রে পড়ুয়া আসা কমে গিয়েছে।’’ বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মঙ্গলবার উখড়ার গুলজারবাগ বাসস্ট্যান্ডের সামনে এক মহিলার সঙ্গে থাকা একটি শিশু কান্নাকাটি করায় পথচলতি মানুষের সন্দেহ হয়, তিনি শিশুটিকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েক জন বাসিন্দা মহিলাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, শিশুটি মহিলার সন্তান। তিনি উখড়ায় বোনের বাড়িতে এসেছিলেন। শিশুটি সেখানে থেকে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে কান্নাকাটি করছিল। তৃণমূলের ছোড়া অঞ্চল সভাপতি রামচরিত পাসোয়ান জানান, সম্প্রতি বালুডাঙালেও ছেলেধরা গুজবের জেরে গোলমাল বেধেছিল। বুধবার সন্ধ্যায় অণ্ডালের কাজোড়া মাঝিপাড়ার কুলডাঙা এলাকায় এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে কিছু লোকজন আটক করা হয়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, বিহারের ওই যুবক জানিয়েছেন, তাঁর দাদা এই এলাকায় থাকেন। তাঁর কাছেই এসেছিলেন তিনি।
শঙ্করপুরের পঞ্চায়েত সদস্য জুম্মান শেখ বলেন, ‘‘আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিলে গ্রেফতার হতে হবে। আমরা এলাকায় তা প্রচার করছি।” পুলিশ জানায়, যুবককে মারধরে জড়িতদের খোঁজ চলছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ বলেন, “সম্প্রতি যতগুলি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, সব ক’টি ক্ষেত্রেই মামলা রুজু করে দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের তরফে সব ক’টি থানা এলাকায় মাইকে করে প্রচার চালানো হচ্ছে। গুজবে কান না দেওয়া, আইন হাতে তুলে না নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে।”
এ দিনই ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়ার একটি ক্লাবে গুজব সম্পর্কে সচেতন করতে শিবিরের আয়োজন করে পুলিশ। এসিপি (পূর্ব) আরিস বিলাল এলাকায় কাউকে সন্দেহজনক ভাবে ঘুরতে দেখলে পুলিশ-প্রশাসনকে জানানোর আবেদন জানান। মারধরের ঘটনা ঘটলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি। শিবিরে ছিলেন খনি ও পঞ্চায়েতের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy