মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে জামুড়িয়ার কেন্দা মুচিপাড়ার বাসিন্দা, বছর ৪২-এর বিনোদ রুইদাসের। শুক্রবার তাঁর দেহ বাড়িতে আনা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়াগরাজ রিজ়ার্ভ পুলিশ লাইনের এক কনস্টেবল অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে দেহ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্র দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহের প্রতিক্রিয়া, “উত্তরপ্রদেশ সরকারের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এর পর জেলা প্রশাসন উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তদারকি করবে।” শংসাপত্র না দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য জেলা বিজেপি নেতৃত্বের।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা দুই বোন ও এক ভাই। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিনোদের বাবা, মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী শর্মিলা জানান, তাঁর ভাই বিষ্ণু, বিষ্ণুর এক বন্ধু এবং বিনোদ ২৭ জানুয়ারি প্রয়াগের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ২৮ তারিখ রাত ১১টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে ফোনে বিনোদের শেষ বারের মতো কথা হয়। ২৯ তারিখ সকাল ৭টা নাগাদ বিষ্ণু জানতে চান, জামাইবাবু তাঁকে ফোন করেছিলেন কি না? উত্তরে না বলেছিলেন শর্মিলা। এর পরে ৩০ তারিখ রাত ৭টা নাগাদ বিষ্ণু জানান, জামাইবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি ভাল আছেন। শুক্রবার সকালে জানতে পারেন, স্বামীর দেহ নিয়ে আসা হয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়েন শর্মিলা। তিনি বলেন, “বাড়িতে রোজগেরে বলতে আর কেউ নেই। উত্তরপ্রদেশ সরকার মৃত্যুর শংসাপত্র দেয়নি। তাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা বলতে কিছু রইল না। কী ভাবে চলবে ঈশ্বরই জানেন।” কাঁদতে কাঁদতে বিনোদের মা সাবিত্রী বলেন, “এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি।”
কী ঘটেছিল? বিষ্ণু জানান, তিন জন এক সঙ্গেই ছিলেন। হঠাৎ প্রচুর মানুষের ঠেলায় তিন জন ছিটকে যান। পদপিষ্টের ঘটনার পরে প্রচুর মানুষ বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করছিলেন। কিন্তু কাউকে বাঁচাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি। বিষ্ণু বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে মেডিক্যাল কলেজে জামাইবাবুর ছবি দেখে জানতে পারি তিনি আর নেই। স্থানীয় প্রশাসন দেহ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিলেও, মৃত্যুজনিত শংসাপত্র দিতে চায়নি। আশা করি, ভবিষ্যতে যাতে পূণ্যস্নান করতে গিয়ে এমন ভাবে কেউ প্রাণ না হারান, উত্তরপ্রদেশ সরকার তা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।”
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকার মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ঘামাচাপা দিতে চেয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। বিনোদের মৃত্যুর ঘটনায় বোঝা গেল, সবাইকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার জন্য মৃত্যুর শংসাপত্র ওরা দিল না। এ রাজ্যের সরকারের উচিত বিষয়টি মোকাবিলা করা।” তৃণমূল পরিচালিত কেন্দা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মৃত্যুর শংসাপত্র না দেওয়া অমানবিক। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারের পাশে সব রকম ভাবে থাকার চেষ্টা করব।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইও বলেন, “অনুচিত হয়েছে। ওই পরিবার যাতে শংসাপত্র পায়, দলের তরফে চেষ্টা করা হবে।”
ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস জানান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। দেহটি ময়না তদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)