ঘটনাস্থলে শান্তিকে (ইনসেট) খুনের অস্ত্র খুঁজছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
বৃদ্ধা পরিচারিকাকে খুনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বারাপুর এলাকা থেকে শান্তি হাজরার (৬২) ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার মেলে। তাঁর বাড়ি মামুদপুর গ্রামে। তাঁকে খুনের অভিযোগে ওই গ্রামেরই বছর পঞ্চাশের বধূ কাকলি রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ধৃতকে কালনা আদালতে তোলা হলে, তার পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও খুনের কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিঃসন্তান শান্তি থাকতেন ভাইপো বাপন হাজরার সঙ্গে। রোগা এবং ছোটখাট চেহারার এই বৃদ্ধা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। বছর দেড়েক আগে রায় পরিবারে তিনি কাজে যোগ দেন। স্বামী অসিত রায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কাকলি থাকত ডায়মন্ডহারবারে বাপের বাড়িতে। বছর দু’য়েক আগে সে ফিরে আসে স্বামীর কাছে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয়েরা দাবি করেছেন, সোমবার রাত ৭টা নাগাদ মামুদপুর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বারাপুর এলাকায় তাঁরা এক মহিলাকে ছুটে পালাতে দেখেন। সে সময় মহিলা রক্তমাখা ছিল। সন্দেহ হওয়ায় বাসিন্দারা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, রাস্তার পাশে জমিতে এক বৃদ্ধার ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ছুটে যাওয়া ওই মহিলাকে ধরে আটকে রাখেন। খবর দেন মন্তেশ্বর থানায়। পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, ওই মহিলা কাকলি রায়।
পুলিশ বৃদ্ধাকে মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস, এসডিপিও (কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য এবং সিআই তাপস দাস। বারাপুরের এক বাসিন্দার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কাকলিকে গ্রেফতার করে।
নিহতের ভাইপো বাপনের দাবি, ‘‘এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, পিসির দেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গাল এবং গলায় অনেক ক্ষত। চুল ছেঁড়া। শুনছিলাম, ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার জন্য পিসিকে সঙ্গে নেবে বলেছিল রায়বাড়ির গিন্নি। কিন্তু সে যে পিসিকে খুন করবে ভাবিনি। কারণটা ঠিক বুঝতে পারছি না।’’ ধৃতের স্বামী অসিত দাবি করেন, তিনি অসুস্থ। হাঁটাচলা করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার রাতে কী ঘটেছে, জানা নেই। তবে স্ত্রী খুন করেছে, বিশ্বাস করি না।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত বৃদ্ধার গলা থেকে মাথা পর্যন্ত অজস্র আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ওই বৃদ্ধার শরীরে একাধিক বার আঘাত করা হয়। ধারাল সরু কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। যদিও মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও সে রকম কিছু পায়নি।
এ দিকে পুলিশ ধৃত মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ দিন পর্যন্ত বিশেষ কিছু তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশের দাবি, ধৃতের আচরণ তাদের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে। তার মানসিক অবস্থার ব্যাপারে চিকিৎসককের পরামর্শ নেওয়া হবে। পাশাপাশি, বৃদ্ধার সঙ্গে কাকলির কোন কারণে শত্রুতা ছিল কি না, তা জানতে পুলিশ স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত বধূকে বার বার খুনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও, সে নিরুত্তর থেকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy