প্রতীকী ছবি।
যেতে হবে শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। দূরত্ব মেরেকেটে দশ কিলোমিটার। অভিযোগ, শ্বাসকষ্টের রোগীকে এই পথ নিয়ে যেতেই অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া চাওয়া হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। মাঝপথে আবার বিকল হয়ে পড়ে সেই অ্যাম্বুল্যান্স। তার জেরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে বর্ধমানে অভিযোগ করলেন পরিজনেরা। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনার পরে, বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানান তাঁরা।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শহরের ভিতরে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া ২০ হাজার টাকা! সিএমওএইচকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।’’ ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্র। ভেন্টিলেটর-যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সটি বামচাঁদাইপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালের, তার কর্তাদের অবশ্য দাবি, ২০ হাজার নয়, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বিলের প্রতিলিপিও তাঁদের কাছে রয়েছে।
অনাময় হাসপাতালের পাশে নতুন বেসরকারি হাসপাতালে গত সপ্তাহে শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য ভর্তি করানো হয়েছিল মেমারির সাতগেছিয়ার বাসিন্দা, পরিবহণ ব্যবসায়ী স্বপনকুমার দাসকে (৫২)। পরিজনদের অভিযোগ, আইসিইউ-ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি তো দূর, বরং আরও খারাপ হচ্ছিল। স্বপনবাবুর বন্ধু, বিজরা গ্রামের বাসিন্দা তফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ‘‘ওই বেসরকারি হাসপাতাল টাকা লুট করছিল বলা যায়। কিন্তু চিকিৎসায় স্বপনের উন্নতি হচ্ছিল না। তাই আমরা কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তর করার কথা ভাবি। সে জন্য ভেন্টিলেটর-যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করি কাছাকাছি বামচাঁদাইপুরের ওই হাসপাতাল থেকে। ২০ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।’’ তাঁর দাবি, প্রথমে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বাকি টাকা নার্সিংহোমে পৌঁছনোর পরে, দেওয়ার কথা ছিল।
অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স আসার কথা ছিল বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ। আসে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে, তা-ও আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার না নিয়েই। আবার ফিরে গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসেন চালক। স্বপনবাবুর পড়শি সূর্য মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘কিলোমিটার খানেক যাওয়ার পরেই পুলিশলাইনের কাছে অ্যাম্বুল্যান্সটি বিকল হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী মারা যান।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাতে পুলিশলাইনের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স বিকল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছিলেন। খবর পেয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ গেলে রোগীর পরিজনেরা ঘটনা জানান। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃতের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এসেছে। রাত দেড়টা নাগাদ বর্ধমান থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
অনাময় হাসপাতাল লাগোয়া ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগেই মেমারির অসুস্থ এক অন্তঃসত্ত্বাকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। স্বপনবাবুর ক্ষেত্রে বেশি বিল নেওয়ার কথা অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানতে চাননি। হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর শুভজ্যোতি ভট্টাচার্যের দাবি, “আমরা ঠিক বিলই নিয়ে থাকি।’’ অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য বেশি ভাড়া চাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বামচাঁদাইপুরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হাসপাতালের কর্ণধার সৌমেন্দ্র সাহা শিকদারের দাবি, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মর্মাহত। তবে অ্যাম্বুল্যান্সের এত টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ পাল্টা অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্সের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সিএমওএইচ (পূর্ব বর্ধমান) প্রণব রায় বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy