Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Eastern Railways Boy's School

বাংলা মাধ্যমে ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ স্কুলে

এ দিনের বিক্ষোভে ছিলেন আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক, পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর।

আসানসোলে ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় স্কুলের সামনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

আসানসোলে ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় স্কুলের সামনে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ফের বিতর্কে ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় হাইস্কুল। চলতি শিক্ষাবর্ষে বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তি করতে হবে, এই দাবিতে বুধবার স্কুলের গেটে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন’-এর (সিবিএসই) অনুমোদন নিয়ে স্কুলে ইংরেজিমাধ্যমে পড়ানো শুরু হয়েছে।

এ দিনের বিক্ষোভে ছিলেন আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক, পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর। অভিজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনও বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তির জন্য ফর্ম বিলি শুরু করা হয়নি। অথচ, ইংরেজি মাধ্যমের ফর্ম বিলি শুরু হয়ে গিয়েছে। শুনেছি, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তি করা হবে না। এটা হলে আন্দোলন চলবে।’’

শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষেও বাংলার বদলে শুধু ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল বোর্ড। তবে পরে ধারাবাহিক আন্দোলনের জেরে শেষমেশ বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তির জন্য ফর্ম বিলি করা হয়েছিল।

এ দিন তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য ফর্ম বিলির দাবি জানিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি দেন। হিরন্ময়বাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, বিষয়টি নিয়ে রেল বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কেন? রেলের একটি সূত্রের দাবি, এই স্কুলে সাধারণত রেলকর্মীদের সন্তানদেরই লেখাপড়া করার ‘কথা’। খুব অল্প সংখ্যায় বহিরাগত পড়ুয়া ভর্তি করা হয়। দেখা গিয়েছে, বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তির চাহিদা ক্রমশ কমছে। এই মুহূর্তে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়া রয়েছে মোটে কুড়ি জন। তাই রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত, একমাত্র সিবিএসই-র অনুমোদনে ইংরেজি মাধ্যমেই পড়াশোনা হবে।

তবে রেলের এই সিদ্ধান্ত ও ‘যুক্তি’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন জেলার শিক্ষক সমাজের বড় অংশ। তাঁদের মতে, বহিরাগত পড়ুয়া ভর্তি প্রায় বন্ধ করে দেওয়া এবং বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনার প্রতি নজর না দেওয়ার জন্যই ওই মাধ্যমে ছাত্র সংখ্যা কমেছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জেলার শিক্ষকদের একাংশের মতে, রেলের এই সিদ্ধান্ত স্কুলটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও পরিপন্থী। রেল কর্মচারী ও স্থানীয় এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য ১৮৮৬-তে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে স্কুলটি তৈরি হয়। ১৮৯৯-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে পঠনপাঠন চলতে থাকে। ১৯৫৪-য় স্কুলের অনুমোদন দেয় পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। স্কুলের প্রাক্তনী তালিকায় রয়েছেন বিমল কর, নারায়ণ সান্যালের মতো বাংলা সাহিত্যের ব্যক্তিত্বেরা। এ ছাড়া, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট লোক-সংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য, শান্তিনিকেতন কলা ভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাধারমণ বাগচীর মতো ব্যক্তিত্ব।

‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি। প্রয়োজনে আন্দোলন হবে।’’ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র নেতা অমিতদ্যুতি ঘোষও বলেন, ‘‘বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠন তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে জনমত তৈরি করা হবে।’’ তবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে ডিআরএম (আসানসোল) সুমিত সরকার কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy