Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

দাবি তুলে কাজে বাধা, চিন্তায় ইসিএল

কখনও পুনর্বাসন চেয়ে বিক্ষোভ। কখনও দখলদার উচ্ছেদের প্রতিবাদে আন্দোলন। আবার কখনও দূষণ ছড়ানোর নালিশ। ক্ষোভের কারণ যা-ই হোক না কেন, প্রতিবাদের উপায়টা একই রকম— খনির উৎপাদন ব্যাহত করে দিনের পর দিন বিক্ষোভ।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

কখনও পুনর্বাসন চেয়ে বিক্ষোভ। কখনও দখলদার উচ্ছেদের প্রতিবাদে আন্দোলন। আবার কখনও দূষণ ছড়ানোর নালিশ। ক্ষোভের কারণ যা-ই হোক না কেন, প্রতিবাদের উপায়টা একই রকম— খনির উৎপাদন ব্যাহত করে দিনের পর দিন বিক্ষোভ। এমনকী, মাঝে-মধ্যে দাবি আদায়ের জন্য খনির নিরাপত্তাকর্মী থেকে আধিকারিকদের নিগ্রহের পর্যায়েও পৌঁছে যায় সেই আন্দোলন। বারবার নানা খনিতে এমন ঘটনায় কর্মীরা আতঙ্কে ভোগার পাশাপাশি সংস্থাও ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে ইসিএল কর্তাদের দাবি। শুধু ইসিএল কর্তৃপক্ষ নন, এ নিয়ে অসন্তুষ্ট নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও।

প্রায় তিন দশক ধরে লোকসানে চলার পরে বছর আড়াই আগে বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে এসেছে ইসিএল। লাভের মুখ দেখেছে সংস্থা। কিন্তু নানা খনিতে বারবার এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-আন্দোলন সমস্যার মুখে ফেলছে বলে ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আট মাসে বিভিন্ন কোলিয়ারিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভে ৪৬ বার উৎপাদনে বাধা পড়েছে। প্রায় দিনই এমন কোনও না কোনও অভিযোগ এসে পৌঁছয় সংস্থার সদর দফতরে। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সোম ও মঙ্গলবার সালানপুরে ইসিএলের ডাবর কোলিয়ারিতে উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ।

ডাবর খনি লাগোয়া সামডি রোডে রবিবার ডাম্পারের ধাক্কায় জখম হন এক মোটরবাইক আরোহী। ডাম্পারটি ভাঙচুর শুরু হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিগৃহীত হন খনি নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই ঘটনায় খনি কর্তৃপক্ষ পুলিশে অভিযোগ করলে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন ও কয়লা পরিবহণ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখান এলাকার কিছু বাসিন্দা। মঙ্গলবারই রানিগঞ্জের মহাবীর খনিতে কয়লা কাটার জন্য বিস্ফোরণের সময় টুকরো ছিটকে জখম হয় এলাকার এক পড়ুয়া। সেই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে চার ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।

ইসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সম্প্রতি খনির কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভের ঘটনা বেশি ঘটছে সালানপুর এরিয়ার বিভিন্ন খনিতে। মে মাসে এই ডাবর খনিতেই কয়লা চুরি রুখতে গিয়ে প্রহৃত হন নিরাপত্তাকর্মীরা। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে ডাবর খনি লাগোয়া সামডিহি রোডে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত পথচারীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে এলাকাবাসীর একাংশ খনিতে চড়াও হন। হেনস্থা করা হয় নিরাপত্তাকর্মী ও খনির আধিকারিকদের। জানুয়ারিতে এই ডাবর খনিতেই কয়লা চুরি রুখতে গেলে রক্ষীদের সঙ্গে কিছু দুষ্কৃতীর সংঘর্ষ হয়। উদ্ধার হয় ৫০ টন কয়লা। সে দিনই সামডিহির রাধাবল্লভপুর থেকে উদ্ধার হয় আরও ১৪ টন কয়লা। এ ছাড়া সালানপুর এরিয়ার বনজেমাহারি খনি সম্প্রসারণের জন্য ইসিএলের দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে প্রায় প্রায়ই আধিকারিকেরা বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ। ব্যাহত হচ্ছে খনির উৎপাদনও। বারবার কেন এই বিক্ষোভ? কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, ইদানীং সালানপুর এলাকায় কয়লা চুরির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেই জন্য অবৈধ কয়লার এক দল কারবারি এ সব ঘটাচ্ছে। ইসিএলের সালানপুরের জেনারেল ম্যানেজার যোগেন্দ্র বিশওয়াল শুধু বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’ তৃণমূলের সালানপুরের নেতা তথা দলের শিল্পাঞ্চল সাংগঠনিক সম্পাদক পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, ‘‘খনির উৎপাদন বন্ধ করে বিক্ষোভ সমর্থন করি না। খবর পেলেই আমরা দলের তরফে যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নিই।’’

ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, ক্রমাগত এই চড়াও হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত সংস্থার কর্মী-আধিকারিকেরা। জন্মলগ্ন থেকে প্রায় তিন দশক লোকসানে চলার পরে এখন লাভে চলতে শুরু করেছে সংস্থা। ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে বিআইএফআর-এর আওতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। গত বার ৪০ লক্ষ টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করেছে। এ বারের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৪৬ লক্ষ টন। কিন্তু এ ভাবে কাজ ব্যাহত হলে বিপদ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কর্তারা। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘শুধু ইসিএল নয়, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই সবাইকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে।’’

ইসিএলের যৌথ উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র সিংহের বক্তব্য, ‘‘দাবি আদায়ের জন্য গ্রামবাসীদের খনির কাজ বন্ধ করা ঠিক নয়। তবে গ্রামবাসীদের কথাও কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’’ সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘ক্রমাগত হামলায় ইসিএল অসহায় হয়ে পড়েছে। এই আচরণ বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’ আইএনটিইউসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই দাবি করেন। তৃণমূল প্রভাবিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের সম্পাদক হরেরাম সিংহ বলেন, ‘‘আমরা উৎপাদন বন্ধ করে আন্দোলনের বিরোধী। প্রয়োজনে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy