প্রতীকী ছবি।
মাটির কাজ কার্যত বাতিল। বদলে স্থায়ী সম্পদ তৈরির দিকে নজর দিতে হবে। গত ২২ জুলাই রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর একশো দিনের প্রকল্পের এই ‘নিয়ম বদলের’ নির্দেশ-চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসনকে। চিঠির প্রতিলিপি পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠানোও হয়েছে। চিঠিতে ২৫ দফা নির্দেশিকা জারি করে কী কী কাজ করা যাবে না, কোন কোন কাজে নিয়ন্ত্রণ টানতে হবে তা বলা হয়েছে।
নির্দেশিকায় রয়েছে, ব্যক্তিগত পুকুর সংস্কার, প্রত্যক্ষ ভাবে ভূমি সংস্কার, সেচ ডোবা, নদী বাঁধ সংস্কারে মাটির কাজ, স্কুল-অঙ্গনওয়াড়ি সাফ, অস্থায়ী ভাবে কেঁচো সার-অ্যাজোলা তৈরি, সেচ খাল থেকে পলি ও মাটি তোলা, খাল থেকে মাটি তুলে অন্যত্র ফেলা, নদী থেকে বালি-মাটি তোলা, রাস্তায় মোরাম ফেলা, মাটির রাস্তা তৈরি-সহ ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের খাল কোনও ভাবেই এই প্রকল্পে করা যাবে না। বদলে পাকা সেচ খাল, নর্দমা তৈরির মতো দীর্ঘস্থায়ী কাজ করতে হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, বাংলা আবাস যোজনায় বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ হলে স্থায়ী সম্পদ তৈরি হবে। জোর দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত বনসৃজনের উপরে। কোনও ব্যক্তি গাছের চারা লাগালে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে মজুরি মিলবে।
আরও জানানো হয়েছে, বড় সেচখাল, নদীর ধারে বাঁধ তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হলে সেচ দফতরের অনুমতি নিতে হবে। গ্রামীণ হাট রয়েছে, এমন এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা, বসার জায়গা করা যাবে। শিশুদের পার্ক, ইকো-পার্কের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন নিয়মে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাদ দেওয়া কাজগুলি মূলত ‘শ্রমনিবিড়’। পঞ্চায়েতগুলি তাদের বাজেটে এ সব কাজে বেশি টাকা বরাদ্দ করে দফতরে রিপোর্ট করত। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কোনও কোনও পঞ্চায়েত শ্রম বাজেটের চেয়ে তিনগুণ টাকা খরচ করত। এ বছর ওই সব পঞ্চায়েতই শ্রম বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ টাকা খরচ করতে হিমসিম খেয়ে যাবে।’’
এমন নির্দেশিকার কারণ? পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমান, হুগলিতে এসে কেন্দ্রের পরিদর্শকেরা দেখেন, মাটির কাজে খয়রাতি ও লুট চলছে। পরিদর্শকদের রিপোর্ট, একাধিক জায়গায় মাটির কাজ হয়নি। সেই টাকা উদ্ধারের জন্য রাজ্যকে নির্দেশও দেন পরিদর্শকেরা। এর পরেই এই নির্দেশিকা তৈরি করে পঞ্চায়েত দফতর। এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের আপত্তিতেই মাটির কাজে নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়েছে। স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়।’’
নির্দেশিকার কথা শুনে সরকারি আধিকারিকদের একাংশ খুশি। তাঁরা জানান, মাটির কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তোপের মুখে পড়তে হতো তাঁদেরই। পঞ্চায়েত স্তরে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্মাণ সহায়কের (এনএস) দাবি, “পঞ্চায়েতের কর্তারা মাটির কাজ করাতে বাধ্য করাতেন। মাস্টার রোল তৈরি করা হতো। একাধিক অভিযোগও উঠত। মাটির কাজে কোনও স্থায়ী সম্পদ তৈরি হতো না। সব দায় আমাদের ঘাড়ে পড়ত।’’
তবে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মাটির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলায় একশো দিনের প্রকল্পের ‘চাহিদা’ কমেছে। বিগত বছরগুলিতে এই জেলায় দেড় থেকে দু’লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হতো। এখন সে জায়গায় মেরেকেটে ১৫ হাজার কর্মদিবস তৈরি হচ্ছে! ফলে শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে অসুবিধা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy