গ্রামে প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা গ্রামের মানুষের কাছে কতটা পৌঁছচ্ছে, ঠিক সময়ে প্রকল্পগুলি রূপায়িত হচ্ছে কি না— এ সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে ‘চলো গ্রামে যাই’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি শুরু করল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজির নেতৃত্বে সম্প্রতি বারাবনির দু’টি গ্রামে এই কর্মসূচি হয়েছে।
কেন এমন পরিকল্পনা? জেলায় আটটি ব্লকের মোট ৬২টি পঞ্চায়েতের অধীনে প্রায় ৪০৭টি গ্রাম রয়েছে। জেলাশাসক জানান, পরপর দু’টি প্রশাসনিক বৈঠকের পরে তাঁদের মনে হয়, সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা ঠিক সময়ে ঠিক মানুষের হাতে পৌঁছনোর জন্য আরও সুসংহত পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। তাই এই কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামবাসীর বাড়ির দরজায় প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছচ্ছে কি না, তা জানা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, প্রশাসনের কর্তাদের গ্রামে যাওয়ার এমন কর্মসূচি নতুন নয়। ২০১৫-য় সাবেক বর্ধমান জেলা প্রশাসন ‘প্রশাসন আপনার দুয়ারে’ শীর্ষক কর্মসূচি নিয়েছিল। বছরখানেক আগে পশ্চিম বর্ধমানেও জেলাশাসক ও গ্রামবাসীর মধ্যে আলোচনার জন্য প্রতি সপ্তাহে বুধবার দিনটি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। লাগোয়া জেলা পুরুলিয়াতেও এমন ধরনের প্রশাসনিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গত রবিবার বারাবনির পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের রাঙাড়াভিটা ও কদমা গ্রামে যান জেলাশাসক পূর্ণেন্দুবাবু-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিকেরা। সেখানে গ্রামবাসীর একাংশ জেলাশাসকের কাছে রাস্তা, পানীয় জল, পথবাতির অভাব মেটানো, ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় বাড়ি ও শৌচাগার তৈরি, নিয়মিত একশো দিনের প্রকল্পের কাজের ব্যবস্থা করা-সহ নানা আবেদন জানান। জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘গ্রামে আধারকার্ড, একশো দিনের কাজের জবকার্ড, তফসিলি জাতি-উপজাতি শংসাপত্র দেওয়া, নানা রকম পেনশন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া ইত্যাদির চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে নিয়মিত বিশেষ শিবির করে এই সব পরিষেবা দেওয়া হবে। প্রশাসনের কর্তারা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ করবেন।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি প্রকল্পে স্বাস্থ্য পরিষেবা, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের টাকা ঠিক মতো মিলছে কি না, গ্রামে গিয়ে সে সব খোঁজ করা হয়। গ্রামে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের দেওয়া ‘ইতিবাচক’ রিপোর্ট কতটা ঠিক, গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি সেই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে কি না, সে সবও এই কর্মসূচির মাধ্যমে খোঁজ করা হবে।
তবে জেলার বিরোধীরা প্রশাসনের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছেন। তাঁরা জেলা প্রশাসনেরই জুনের একটি পরিসংখ্যান তুলে জানাচ্ছেন, বিপিএল তালিকাভুক্ত বাসিন্দাদের জন্য ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জেলায় মোট প্রায় ২৪ হাজার বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও, ওই মাস পর্যন্ত বাড়ি তৈরি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার! বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীদের অভিযোগ, ‘‘সামনে ভোট। এখন তাই ঘুম ভেঙেছে প্রশাসনের। ন্যূনতম পরিষেবা থেকে গ্রামের মানুষ বঞ্চিত।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশাসনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সদর্থক। বিরোধীরা সব ভালতেই খারাপ খোঁজেন।’’ পাশাপাশি, প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মীরা বাসিন্দাদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করবেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরও শুরু করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy