শনিবার কালনার গোপালদাসপুরে তাঁর স্মরণে তৈরি করা শহিদ বেদিতে যান অভিষেক। দয়ালের মা ছবি হাজরা অভিষেককে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন অভিষেক। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
রাস্তায় বড় বড় ব্যানার-ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছিল, তোরণ বসেছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাস্তা ধরে যাওয়ার কথা থাকায় সারা হয়েছিল আয়োজন। কিন্তু কর্মসূচিতে পরিবর্তন হওয়ায় সে রাস্তায় যাওয়া হল না তৃণমূল নেতার। কালনা ১ ও ২ এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের একাংশের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকে তাই হতাশ হলেন শনিবার।
এ দিন পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর থেকে অভিষেক মন্তেশ্বরে যান। সেখানে সভা করার পরে পৌঁছন কালনার বৈদ্যপুরের গোপালদাসপুরে। সেখানে কর্মসূচি সেরে মেমারিতে গিয়ে রোড-শো করেন। আগে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এ দিন অভিষেকের শ্রীরামপুর থেকে এসটিকেকে ধরে কালনার বৈদ্যপুর মোড়ে পৌঁছে সেখান থেকে কালনা-বৈঁচি রোড হয়ে গোপালদাসপুরে রাখালরাজ মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল। পূর্বস্থলী থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার লম্বা এই রুট সে জন্য সাজা হয়। কিন্তু এ দিন কর্মসূচির রুট পরিবর্তন করা হয়।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, জনসংযোগের জন্য কালনা বিধানসভা এলাকাতেও প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন অভিষেক যে রাস্তা ধরে পৌঁছন, তাতে তার মধ্যে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পড়ে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, প্রথমে কালনা হয়ে মন্তেশ্বর পৌঁছলে পরে মেমারির একটি এলাকায় যেতে ফের একই রাস্তা ব্যবহার করতে হত। এক রাস্তায় দু’বার না যাতায়াত করার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।
মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম হাটতলার সভায় অভিষেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা না দেওয়ার অভিযোগে সরব হন। পঞ্চায়েত ভোটে জিতে যাঁরা প্রধান হবেন, প্রতি তিন মাস অন্তর তিনি তাঁদের কাজের পর্যালোচনা করবেন বলেও জানান। সভায় ভিড় দেখে অভিষেক বলেন, ‘‘নবজোয়ার কর্মসূচি জনজোয়ারে পরিণত হয়েছে।’’ পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই কোনও নেতার কথায় নয়, জনমতের ভিত্তিতে হবে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে কালনার বৈদ্যপুরের গোপালদাসপুরে পৌঁছন অভিষেক। বিকেল ৪টে থেকেই এলাকায় রাস্তার দু’পাশে বহু মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। গত বছর ২৮ জুলাই দয়াল হাজরা নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। বিজেপি তাঁকে খুন করেছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। গোপালদাসপুর মোড়ে মৃত কর্মীর নামে শহিদ বেদি রয়েছে। সেখানে অভিষেক মাল্যদান করেন এবং দয়ালের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। মৃতের মা ছবি হাজরা তাঁকে জানান, পরিবারে উপার্জনকারী ছিলেন দয়াল। দোষীদের শাস্তি ও পরিবারটি যাতে সহযোগিতা পায়, সে আর্জি জানান তিনি। অভিষেক তাঁকে আশ্বস্ত করেন। এর পরে অভিষেক মেমারি রওনা দেন।
অভিষেকের সঙ্গে ছিলেন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ, কালনা ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়েরা। এ দিন গোপালদাসপুরে রাখালরাজা মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল অভিষেকের। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সন্ধ্যা ৭টায় রাখালরাজা মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। দেরি হয়ে যাওয়ায় অভিষেক সেখানে যেতে পারেননি। গোপালদাসপুর মোড় থেকে বৈদ্যপুরের সাবিতপুর পর্যন্ত রোড-শো করে মেমারি রওনা দেন তিনি।
মেমারিতে ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল ও বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের অভিযোগ অনেক দিনের। এ দিনও দু’পক্ষকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ব্যবধানে দাঁড়াতে দেখা যায়। সাতগেছিয়ার জীবন ঠাকুরের মোড়ে ইসমাইলের লোকজন ও সাতগেছিয়া বাজারের কাছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও তাঁর দলবলকে দেখা যায়। রোড-শোয়ের জন্য ট্রাক্টরে করে অনেকে আসেন। মেমারি শহরের মধ্যে দিয়ে যাত্রা এগোয়। ছিলেন ডিআইজি শ্যাম সিংহ (বর্ধমান রেঞ্জ), পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) কামনাশিস সেন।
বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কালনায় খুনের ঘটনায় কোনও রাজনীতির যোগ ছিল না। তৃণমূল গোড়া থেকে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘জনসংযোগ যাত্রার জন্য বহু টাকা খরচ করে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল। অনেক জায়গায় আমাদের পতাকাও খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রচারের এত অর্থ সৎ ভাবে আসতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy