নীলপুরের হরিপদ প্রাথমিক স্কুল। নিজস্ব চিত্র
গোছানো ক্লাসঘর, সামনে সবুজ মাঠ। স্কুলের দেওয়ালে আঁকা রয়েছে সহজপাঠের নানা ছবি। শিক্ষকও হাজির। কিন্তু পড়ুয়া কই! শিক্ষকদের দাবি, হাতেগোনা দুজন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের প্রায় প্রতিদিনই বাড়ি থেকে ডেকে আনতে হয়। না হলে তালা পড়ে যেতে পারে বর্ধমান শহরের নীলপুরের হরিপদ প্রাথমিক স্কুলে।
অতিমারির সময়ে ১৮ জন পড়ুয়া ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে চলে যায় আট জন। পরের বছর কয়েকজন অন্য স্কুলে ভর্তি হয়। পড়ুয়া সংখ্যা দাঁড়ায় একে। আর শিক্ষক হয়ে যান দুজন। তাঁদের এক জন পার্শ্বশিক্ষক। এ বছর খাতায় কলমে আর এক জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। তবে পড়ানোর আগে তাদের ডেকে আনা, পাশের স্কুল থেকে মিড-ডে মিল আনার দায়িত্ব শিক্ষকদেরই।
কয়েক দিন আগে হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একটি পর্যবেক্ষণ শিক্ষকদের চিন্তা বাড়িয়েছে। শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত একটি মামলার পর্যবেক্ষণে রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে বিচারপতি জানান, ‘পড়ুয়া অত্যন্ত কম থাকলে স্কুলের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিন। অযথা শিক্ষক রেখে লাভ কী? যেখানে শিক্ষক নেই, সেখানে পাঠান’। তার পর থেকেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে ওই স্কুলের শিক্ষকদের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিচারপতির নির্দেশ এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকের হার জানাতে অবর স্কুল পরিদর্শক বা এসআইদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও এই স্কুলে ৬০ জন পড়ুয়া, চার জন শিক্ষক ছিলেন। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলত ভালই। অতিমারির পর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। শিক্ষকেরা অবসর নেন। নতুন করে নিয়োগ আর হয়নি। শিক্ষক অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে স্কুলটা যেন জেলখানা! এ বছর পড়ুয়া আনার জন্য এলাকায় ঘুরেছিলাম। দু’জনকে ভর্তি করতে পেরেছি। স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।’’
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, নীলপুরের আর্যপল্লি, কমলাদিঘি, উত্তরপাড়ার অভিভাবকেরা এই স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই বলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান না। আবার ১৯৭৩ সালে তৈরি স্কুলে পড়ুয়া নেই বলে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ শিক্ষক দিতেও চায়ছে না। অভিভাবক অনন্ত হাঁসদা, আশা সাউদের দাবি, ‘‘এক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ-ছটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। অনেকেই অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।’’
জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘অন্য স্কুলের সঙ্গে নীলপুরের স্কুলটিকে একত্র করে দেওয়া যায় কি না, ভাবনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy