কালনায় ধৃত। নিজস্ব চিত্র
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা টাকা প্রথমে দু’তিন মাসে হয়ে যেত প্রায় দ্বিগুণ। আরও অল্প সময়ে টাকা রোজগারের আশায় বিনিয়োগ করলেই, তা আত্মসাৎ করে নিত প্রতারকেরা। এমন ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে, চক্রে জড়িত বলে অভিযুক্ত এক জনকে গ্রেফতার করে দাবি পুলিশের। ধৃত সন্দীপ সেন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের তামাঘাটার বাসিন্দা। ব্যাঙ্কের তথ্য ঘেঁটে ও তাঁর কমিশনের অঙ্ক কষে পুলিশের অনুমান, অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্লক ও তার আশপাশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতারকেরা হাতিয়েছে ৭ কোটিরও বেশি টাকা।
সম্প্রতি পূর্বস্থলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পূর্ব আটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিক মল্লিক। তাঁর অভিযোগ, তামাঘাটার সন্দীপ-সহ ১৯ জন এলাকার বহু মানুষকে অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখান। তাদের কথা মতো মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে একটি সংস্থায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই টাকা তিনি দু’টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। অল্প কিছু ফেরত দেওয়ার পরে সংস্থার অ্যাপটি অচল হয়ে যায়। এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ জানতে পারে, এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, হুগলি, নদিয়া-সহ নানা জেলায় ছড়িয়েছে এর জাল।
তদন্তকারীদের দাবি, সমাজমাধ্যম ও গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্কের বহু ‘কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট’-এর নামে প্রতারক সংস্থার লিঙ্ক পৌঁছে যায় মানুষের কাছে। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংস্থার বিভিন্ন জিনিসপত্রের দর লিখে রাখে। যে কোনও জিনিসে নির্দিষ্ট দরে বিনিয়োগ করলে, তার লাভ বাবদ অর্থ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় উপভোক্তাদের। কালনার এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘সংস্থাটিতে বিনিয়োগ করার পরে প্রতিদিন কিছু কিছু টাকা পেতাম। কিন্তু দু’সপ্তাহে দ্বিগুণ পাওয়ার আশায় ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরে যৎসামান্য ফিরে পাই।’’
পুলিশ ৩ অগস্ট সুকান্ত নস্কর নামে এক জনকে গ্রেফতার করে। প্রতারিতদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, তামাঘাটার সন্দীপ মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে অনেককে বিনিয়োগ করান। শুক্রবার রাতে পলাতক সন্দীপের খোঁজ মেলে নাদনঘাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। শনিবার তাঁকে কালনা এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। সন্দীপের আইনজীবী সুরজিৎ রায় ও সফি আসিফ রহামান দাবি করেন, তাঁদের মক্কেল নির্দোষ। তাঁর জামিনের আর্জি জানানো হয়। যদিও সরকার পক্ষের আইনজীবী রূপম মজুমদার অভিযোগ করেন, একটি অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা হয়ছে। সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম না মেনে ওই অর্থ তোলা হয়েছে। আরও তথ্য পেতে ধৃতকে জেরা করা প্রয়োজন। বিচারক দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় সন্দীপকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এ দিন আদালত চত্বরে সন্দীপ দাবি করেন, চলতি বছরের ২ মার্চ তিনি একটি লিঙ্ক পেয়ে অনেকের মতো ওই সংস্থায় টাকা বিনিয়োগ করেন। তাঁর মাধ্যমে আরও প্রায় একশো জন ব্যবসা করেন। যাঁরা তাঁর কাছ থেকে লিঙ্ক নিয়েছিলেন, তাঁরাও অন্যকে লিঙ্ক দেন। সংস্থার কাছ থেকে তিনি ৩০ লক্ষ টাকার বেশি আয় করেছেন বলে দাবি।
যদিও পুলিশের দাবি, সন্দীপের ব্যাঙ্কের তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, তিনি ৪৫ লক্ষ টাকা কমিশন পেয়েছেন সংস্থা থেকে। দৈনিক তাঁর কাছে কমিশন আসত প্রায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। সেই টাকা তিনি ফ্ল্যাট এবং সোনা কেনায় বিনিয়োগ করেছেন। তবে এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৯৯ হাজার টাকা। এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, ‘‘বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে সংস্থাটি। তাদের খপ্পরে পড়ে রাজ্যের নানা প্রান্তের আইনজীবী, শিক্ষক, সরকারি কর্মী-সহ বহু সাধারণ মানুষ টাকা খুইয়েছেন। মোটা টাকা বিদেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে তদন্ত করলে চক্রের মাথার খোঁজ মিলতে পারে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস জানান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy