সাইকেলের সামনে লেখা ‘জঙ্গলে আগুন লাগানো মহাপাপ’, পিছনে লেখা— ‘হরিণ, নেকড়ে, শিয়াল, নীলগাই, ময়ূরদের রক্ষা করতে জঙ্গলে আগুন লাগাবেন না’, আর মাঝখানে ঝুলছে ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ লেখা’ পোস্টার।
পাতা ঝরার মরসুমে সচেতনতা বাড়িয়ে জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনা কমাতে এমন নানা পোস্টার সহ গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন কাঁকসার মলানদিঘি পঞ্চায়েতের আকন্দারা গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ অশোক রায়। তাঁর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
কাঁকসা ব্লকের বেশির ভাগ গ্রাম জঙ্গলে ঘেরা। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে এই জঙ্গলে। অথচ, প্রতি বছর পাতা ঝরার মরসুমে বিভিন্ন জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। একদিকে যেমন বহু গাছের ক্ষতি হয়, তেমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জঙ্গলের বহু বন্যপ্রাণী। বন দফতর প্রতিটি এলাকায় সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তারপরেও জঙ্গলে আগুন লাগা কমে না। এই জঙ্গলকে রক্ষা করতেই সচেতনতা চালিয়ে যাচ্ছেন ৬৮ বছরের প্রবীণ অশোক রায়। তিনি মূলত পিয়ানো বাদক। কলকাতার বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে অনুষ্ঠান করেছেন। এখন সাইকেলে ঘুরে ঘুরে জঙ্গল ঘেঁষা গ্রামগুলিতে গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। জঙ্গলে আগুন লাগলে তৎক্ষণাৎ বন দফতরের আধিকারিকদের জানানোরও বার্তা দিচ্ছেন।
এমন উদ্যোগের পিছনে রয়েছে গাছের প্রতি ভালবাসা। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘বরাবর গাছ ভালবাসি। বছর দশেক ধরে মলানদিঘি পঞ্চায়েত এলাকায় নিজের উদ্যোগে কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছি।’’ তিনি জানান, জঙ্গলে বহু পাখির আনাগোনা। সেই কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগানো থেকে। সেখানে আম, জাম, মহুয়া মতো ফলের গাছ বেশি রয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছর জঙ্গলে আগুন লাগেই। ক্ষতির মুখে পড়ে বন্য জীবজন্তুরা। আদিবাসী প্রধান এলাকার মানুষদেরও সমস্যার মুখে পড়তে হয়। জঙ্গলের আগুন থেকে তাদের গ্রামেও আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। গত বছর তাঁর লাগানো আম গাছও পুড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি সাইকেল নিয়েই সচেতন করতে বেরিয়েছি। সকল মানুষকে বোঝাচ্ছি। কাউকে আগুন লাগাতে দেখতে পেলে বন দফতরে খবর দেওয়ার বার্তা দিচ্ছি।’’ তাঁর লক্ষ্য, জঙ্গলমহল জুড়ে সচেতনতা প্রচার চালিয়ে যাওয়ার।
অশোকবাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসীও। তেমনই কয়েক জন বুধি হাঁসদা, রাম সোরেনরা বলেন, ‘‘আমাদের রুজি, রোজগার জঙ্গলের উপরে নির্ভর করে থাকে। এই সময় আগুন লেগে গেলে শালপাতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমরা পাতা তুলতে পারি না। অশোকবাবুর কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)