—প্রতীকী চিত্র।
সন্ধে থেকেই ছেলেটিকে দামোদরের পারে ঘুরতে দেখছিলেন ফেরিঘাটের যাত্রীরা। রাতে কিশোরের কান্নায় চমকে ওঠেন রায়নার শিয়ালি গ্রামের কয়েক জন। নদীর পাড় থেকে কিশোরটিকে গ্রামে এনে পুলিশে খবর দেন তাঁরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জানতে পারে, দুরন্ত ছেলেকে শান্ত করতে স্থানীয় একটি আশ্রম কর্তৃপক্ষের কথায় তাকে নদীর পাড়ে রেখে গিয়েছিলেন বাবা, মা ও দাদু। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে পুলিশ ওই তিন জনকেই বুধবার রাতে গ্রেফতার করে। আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হয়। শিশুকল্যাণ সমিতি কিশোরটিকে হুগলির সিঙ্গুরের একটি হোমে পাঠায় বৃহস্পতিবার।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “ওই কিশোরকে উদ্ধার করার পরে তার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়। তাঁরা ছেলেকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। কিশোরের বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরর বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। তার মামার বাড়ি মেমারিতে। মামার বাড়ির সূত্র ধরেই ছেলেটির পরিজনের ওই আশ্রমে যাতায়াত ছিল। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রটি পুলিশকে জানিয়েছে, আশ্রম কর্তৃপক্ষের কথাতেই তার বাবা, মা ও দাদু তাকে রেখে গিয়েছিল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সপ্তর্ষি অধিকারী বলেন, “এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা। কেউ কেউ তা কাজে লাগিয়ে নিজের উদেশ্য সাধন করতে চান।’’
২০ বছর ধরে আশ্রমটি রয়েছে ওই এলাকায়। পুলিশের দাবি, বুধবার জানা যায়, ওই আশ্রমেই কিশোরের মা রয়েছেন। কিন্তু খোঁজ নিতে গেলে আশ্রমের মহিলা ভক্তেরা তাদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। পরে আরও পুলিশ নিয়ে গিয়ে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। পুলিশ প্রথমে মা, পরে বাবা ও দাদুকে
গ্রেফতার করে।
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় তাঁদের জানিয়েছেন, আশ্রমের উপরে তাঁদের অগাধ ‘বিশ্বাস’। বেশ কয়েক বার আশ্রমের জন্যই তাঁদের ছেলে বিপদের হাত থেকে বেঁচেছে। ছেলে ক্রমশ চঞ্চল হয়ে উঠছে, তা শোধরাতেই এ বার আশ্রমে আসেন তাঁরা। নদীর পাড়ে রাত কাটালে দুষ্টুমি কমে যাবে, সেই বিশ্বাসে সেখানে ছেলেকে রেখে যান তিন জনে। এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে মা অবশ্য বলেন, “কী ভুল করেছিলাম, বুঝতে পারছি। গ্রামের লোক এগিয়ে না এলে আমার ছেলের বড় বিপদ
হতে পারত।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বর্ধমানের কর্তা চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিশোর ছেলে চঞ্চল হতেই পারে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, কুসংস্কারে আবদ্ধ থাকলে বিপদ বাড়ে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ
নিতে হবে।’’
এ দিন ওই তিন জনকে বর্ধমান আদলতে তোলা হলে বাবাকে দু’দিনের পুলিশ-হেফাজত, মাকে দু’দিনের জেল-হেফাজত ও দাদুকে শতার্ধিন জামিন দেওয়া হয়। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘কুসংস্কারের ফল এই ঘটনা। প্রতিটি ব্লকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy