প্রতীকী ছবি
চিত্র এক: গলসির ভূড়ি পঞ্চায়েতের জুজুটি গ্রামের লাল্টু সিংহ, সত্যনন্দপুরের রাঘব ঘোষ পেশায় দিনমজুর। একশো দিনের প্রকল্পেও কাজ করেন। প্রকল্পের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে অ্যাকাউন্টেও চলে আসে। কিন্তু সেই টাকা হাতে পেতে ছুটতে হয় আট কিলোমিটার দূরে, উড়াচটিতে। কারণ, কাছাকাছি কোনও ব্যাঙ্ক নেই।
চিত্র দুই: বার্ধক্যভাতা পান রায়নার বেঁদুয়া গ্রামের তারাপদ সাহা। প্রতিবন্ধীভাতা পান খণ্ডঘোষের তোরকোনা গ্রামের উদয় সাহা। কিন্তু ভাতার টাকা তুলতে তাঁদেরও প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে রায়নার সেহারাবাজারে যেতে হয়।
এমন এক-দু’টো ছবি নয়। জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা জানান, পূর্ব বর্ধমানের নানা পঞ্চায়েতের ত্রিসীমানায় নেই ব্যাঙ্কের কোনও শাখা। ফলে, ব্যাঙ্কে যাওয়া-আসার ফলে একটা দিন যেমন নষ্ট হয়। বাড়ে যাতায়াতের খরচ, দুর্ভোগ। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মাঠে মারা যায় গোটা এক দিনের রুজিও।
অথচ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশানুসারে, পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ব্যাঙ্ক-পরিষেবা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তার পরেও এই পরিষেবা মেলে না বলেই অভিযোগ উদয়বাবু বা রাঘববাবুদের। যদিও নির্দিষ্ট ভাবে কতগুলি গ্রাম ব্যাঙ্ক-পরিষেবার ‘বাইরে’ রয়েছে, তা নিয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেনি জেলার লিড ব্যাঙ্কের সদর দফতর ও জেলা প্রশাসন। তবে একটি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আউশগ্রামের দু’টি ব্লকের সব পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্ক ‘নেই’। সে জন্য দেবশালায় একটি ব্যাঙ্কের উপরে ২০টি গ্রাম নির্ভরশীল! ভাল্কিতে ১৪টি মৌজার মানুষের ভরসা একটি ব্যাঙ্ক। একই ছবি গলসির ভূড়ি, ভাতারের মাহাচান্দা, মাহাতা, ভাতারেও।
ওই তথ্য অনুসারেই, বর্ধমান ১-এর খেতিয়া ও বেলকাশ পঞ্চায়েতের ১৭টি করে মৌজায়, বর্ধমান ২-এর গোবিন্দপুরের ২৩টি, রায়না ১-এর নারুর ১৯টি, মেমারি ১-এর দেবীপুরের ১৯টি, মেমারি ২-এর কুচুটের ২০টি, কাটোয়া ২-এর সিঙ্গি, জগাদনন্দপুরের ২০টি এবং মঙ্গলকোটের চানক পঞ্চায়েতের ১৮টি মৌজা নিয়ে একটি করে ব্যাঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া, ১৩-১৬টি মৌজা নিয়ে একটি ব্যাঙ্ক রয়েছে, এমন পঞ্চায়েতও জেলায় অনেকগুলি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নানা প্রকল্পের উপভোক্তাদের পাশাপাশি, চাকরিজীবীরাও সমস্যায় পড়ছেন। কন্যাশ্রী বা কোনও স্কলারশিপের টাকা তুলতে সমস্যায় পড়ছেন পড়ুয়ারা। লাল্টুবাবু, গলসির মালতি শিকদার, কাটোয়ার ইসালমপুরের কলিম শেখদের ক্ষোভ, ‘‘টাকা তোলা ও জমা, সবের জন্য ভরসা বহু দূরের একটি ব্যাঙ্ক। সেখানে যাওয়া মানে গোটা একদিন কাবার।’’ প্রবীণদের আবার কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে লাইনও পড়ে লম্বা। ফলে, সেখানে গিয়ে সময় নষ্ট হওয়াটাও দ্বস্তুর। অনেকে আবার জানান, একবেলা কাজ সেরে ব্যাঙ্কে গেলে লাইনে আটকে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছনো যায় না। ফলে, গোটা দিনটা নষ্ট হয়। ফের আসতে হয় অন্য দিন। তা ছাড়া, কোনও কারণে ব্যাঙ্কের শাখায় ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, তিনশোটি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিকে ব্যাঙ্ক-পরিষেবার আওতার মধ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলার লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রঞ্জন গুহ অবশ্য জেলায় পরিষেবা নিয়ে ‘খুব সমস্যা’ রয়েছে, তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘৯০ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা রয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ব্যাঙ্ক-করসপন্ডেন্ট, গ্রাহক সহায়তা কেন্দ্র ও ব্যাঙ্ক ‘আউটলেট’ থাকায় সব বড় গ্রামেই পরিষেবা পৌঁছে গিয়েছে।’’
তবে গ্রাহকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘কতটা পথ পেরোলে তবে ব্যাঙ্কের দেখা মিলবে, টাকা তোলা-জমা দেওয়ার সময় এই ভাবনাটাই
চেপে বসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy