বন্দোবস্ত রনির। খণ্ডঘোষে। নিজস্ব চিত্র
করোনা পরিস্থিতিতে ‘অনলাইন’ পরিষেবার গুরুত্ব বেড়েছে। পড়াশোনা থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা পরিষেবা, নানা বিষয়ে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় সমস্যা ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে। প্রত্যন্ত নানা জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কম বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে আবার ইন্টারনেটের খরচ বহনে বিপাকে পড়েন অনেক গ্রামবাসী। ফলে, পড়ুয়ারা বেশি সমস্যায় পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠে। খণ্ডঘোষের এমন একটি গ্রামে পড়ুয়াদের ইন্টারনেটের সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এসেছেন এক ব্যবসায়ী যুবক। বছর পঁচিশের রনি দালাল গ্রামে চালু করেছেন বিনামূল্যে ‘ওয়াই-ফাই’ পরিষেবা।
খন্ডঘোষ ব্লকের প্রায় শেষ প্রান্তে মেটেডাঙা গ্রাম। বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে এলাকায়। ইন্টারনেটের গতিও বেহাল। গ্রামে স্কুল-কলেজের বেশ কিছু পড়ুয়া রয়েছে। অনলাইন ক্লাস করতে বেশ মুশকিল হয় বলে তাদের অভিযোগ। তাদের কথা ভেবেই ওয়াই-ফাই-এর ব্যবস্থা করেছেন, জানান মুদিখানা ব্যবসায়ী রনি। বাঁকুড়া-বর্ধমান রোড লাগোয়া মেটেডাঙা গ্রামের কালীমন্দিরের কাছেই তাঁর বাড়ি। নিজের বাড়ির উপরের তলা এবং রাস্তার বিভিন্ন বাতিস্তম্ভে মোট তিনটি ‘ওয়াই-ফাই’ রাউটার বসিয়েছেন তিনি।
রনি জানান, বছর দু’য়েক আগে থেকে তিনি গ্রামে কম খরচে ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবস্থা করেছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের জন্য এই পরিষেবা বিনামূল্যে দিয়েছেন। গত বছর লকডাউনের সময় থেকে অনলাইনে পড়াশোনা শুরু হয়। ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু ছাত্রছাত্রী গ্রামে ফিরে আসে। নেটওয়ার্কের সমস্যা ও আর্থিক অবস্থার কারণে অনেকেই অনলাইনে ক্লাস করতে পারছিল না। তাদের জন্য এই পরিষেবা চালু করেন রনি। তিনি জানান, ওয়াই-ফাইয়ের পাসওয়ার্ড দিয়েছেন ওই পড়ুয়াদের। জনা পনেরো বিনামূল্যে এই পরিষেবা পাচ্ছে। কেউ কেউ মাসে ৫০ টাকার বিনিময়ে পরিষেবা নিচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা, বেলুড়ে বিএড পাঠরত ছাত্র সুকমল দালালের কথায়, ‘‘ফোনের ইন্টারনেটের গতি নেই। গ্রামে এই ওয়াই-ফাইয়ের সাহায্যে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে বাড়িতে থেকে ক্লাস করতে পারছি বছরখানেক ধরে। অনলাইন পরীক্ষা দেওয়াও সুবিধা হয়েছে।’’ খণ্ডঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শুভজিৎ পাল, আকাশ দালালেরা বলে, ‘‘নেটওয়ার্কের সমস্যায় গত বছর ঠিকমতো ক্লাস করতে পারতাম না। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।’’
রনি বলেন, ‘‘গ্রামের অনেক অভিভাবক মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবার খরচ জোগাড় করতে পারেন না। অনেকে ইন্টারনেটে গতি কমের সমস্যায় ভোগেন। এ সবে পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়ছিল। সে কথা দোকানে বসে শুনতাম। তাই এই উদ্যোগ।’’ তিনি জানান, রাউটার-সহ প্রাথমিক ব্যবস্থাপনার জন্য তাঁর হাজার ছয়েক টাকা খরচ হয়েছিল। এখন মাসে হাজারখানেক টাকা খরচ হয় এই পরিষেবা দিতে। রনি আরও জানান, নিজের দোকানে সংবাদপত্র পড়ার ব্যবস্থাও করেছেন। অনেকে সেখানে সংবাদপত্র পড়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দালাল, মিলন ঘোষেরা বলেন, ‘‘রনির এই উদ্যোগে এলাকার ছেলেমেয়েরা বিশেষ উপকৃত হয়েছে। তাঁর প্রতি গ্রামের মানুষজন কৃতজ্ঞ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy