Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Barabani

ফাটল মাটি, ভাঙল বাড়ি

কিন্তু কেন এই ঘটনা? ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী দেখান, বাড়ির একপাশে বেশ খানিকটা অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে।

বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারাবনি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৫:২৬
Share: Save:

ভোরে চড়চড় করে মাটি ফাটার শব্দ। তা শুনেই সপরিবার বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন বারাবনির ফরিদপুরের বাসিন্দা শেখ সামিম। শুক্রবার দুপুর নাগাদ দোতলা ওই বাড়িটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। কেউ হতাহত হননি। এই ঘটনার পরে, বাড়িটি যে জমিতে তৈরি, সেটির মালিকানা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানান। নির্দিষ্ট কী কারণে এই ঘটনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় প্রশাসন।

প্রায় পনেরো বছর আগে ভানোরা কোলিয়ারি থেকে অবসর নেন শেখ সামিম। পনোরো বছর ধরেই ওই বাড়িতে ছেলে, বউমা, দুই নাতিকে নিয়ে থাকেন তিনি। এ দিন পুলিশকে তিনি বলেন, ‘‘ভোরে মাটি ফাটার শব্দ পাই। দেখি, দালানের চারপাশের দেওয়ালে মাকড়সার জালের মতো ফাটল। অপেক্ষা না করে সবাইকে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসি। পড়শিদের সাহায্যে যাবতীয় আসবাবপত্রও বার করে আনি। তার পরে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়িটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।’’

কিন্তু কেন এই ঘটনা? ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী দেখান, বাড়ির একপাশে বেশ খানিকটা অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশের মতে, সকালেই বিপত্তির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল। সেই মতো, বাড়িটির থেকে দূরত্ব রেখে ভিড় জমাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ির খুব কাছেই বহু পুরনো একটি খনি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, বেসরকারি আমলে ওই খনি থেকে কয়লা তোলা হত। কিন্তু তার পরে সম্প্রতি গত কয়েকবছর ধরে অবৈধ খননও চলছে বলে অভিযোগ। তার জেরেই এই ঘটনা কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কয়লার অবৈধ কারবারের অভিযোগে বারাবনি থানা, ব্লক কার্যালয়ে স্মারকলিপিও দেয় বিজেপি।

এ দিন ভেঙে পড়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন শেখ সামিম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘সময়মতো ঘুম ভেঙে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচেছি। কিন্তু এখন পরিবার নিয়ে কোথায় দাঁড়াব?’’ ঘটনার পরে পড়শিরাই ওই পরিবারটিকে খাবার ও রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ব্লক প্রশাসন (বারাবনি) জানায়, পরিবারটির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঘটনার পরে যে জমিতে বাড়িটি ছিল, সেটির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। এ দিন ঘটনাস্থলে যান বারাবনি থানার পুলিশকর্মীরা এবং বিডিও (বারাবনি) সুরজিৎ ঘোষ। সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ড মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, জমিটির মালিকানা কার নামে। কেন বাড়িটি ভেঙে পড়ল, সে বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেছেন, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, জমিটির মালিকানা রয়েছে বেসরকারি ‘শ্রী’ কোলিয়ারির নামে। কয়লা শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগেই জমিটি ওই কোলিয়ারির নামে নথিভুক্ত। পরে কয়লা শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হলে জমির মালিক হয় ইসিএল। তবে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের দাবি, ‘‘প্রাথমিক খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, জমিটি আমাদের সংস্থার নয়।’’

গৃহকর্তা শেখ সামিম দাবি করেছেন, ‘‘জমিটি আমারই। বাড়িটিও আমিই বানিয়েছি।’’ তবে বিডিও জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখালেই বোঝা যাবে গৃহকর্তার দাবি ঠিক কি না।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই এলাকায় সাম্প্রতিক অতীতে ধসের ঘটেনি। কিন্তু প্রাক্তন খনিকর্তাদের মতে, যে সব এলাকায় পুরনো ‘চানক’ (‌বেসরকারি আমলের কুয়ো খাদান) রয়েছে, সেই সব এলাকায় ভূগর্ভ ফাঁপা। অবৈধ কয়লার কারবারের জেরে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে, সব সময়েই মাটি ফাটা ও ধসের আশঙ্কা থাকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Barabani Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy