ভুয়ো চালান। নিজস্ব চিত্র
নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে বালি পাচারের চালান বার করা হচ্ছিল। সেই চালানের সঙ্গে ‘কিউ আর কোড’ লিঙ্ক করে পুলিশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ‘চোখে বালি’ দিয়ে কারবার ফেঁদেছিল মাফিয়ারা। বৃহস্পতিবার রাতে ওই চক্রের মূল মাথা-সহ চার জনকে খণ্ডঘোষের দু’টি জায়গা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “বিভিন্ন থানায় নকল চালানের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল।’’ পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) কামনাশিস সেনও বলেন, “নির্দিষ্ট তথ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজস্বে ক্ষতি হচ্ছিল। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও কারা জড়িত রয়েছে তা জানা হবে।’’
পুলিশের দাবি, ধৃতদের মধ্যে খণ্ডঘোষের খেজুরহাটি গ্রামের লায়েক আজহারউদ্দিন নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়ো চালান তৈরি করতেন। আজহারউদ্দিন পেশায় ব্যবসায়ী। অনলাইনেও নানা জিনিস বিক্রি করতেন তিনি। বাকি তিন জন, খণ্ডঘোষের কেশবপুরের মীর আবু সিদ্দিকি, বর্ধমান শহরের লস্করদিঘির শেখ মনোজ ও রায়নার জ্যোৎসাদির শেখ মণিরুল হোসেন ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশের দাবি, বালি নিয়ে যেতে ই-চালান দরকার। তাতে থাকা ‘কিউআর কোড’ স্ক্যান করে দেখা হয় চালানটি আসল না নকল। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “সরকারের ওয়েবসাইটের (mdtcl.wb.gov.in) আদলে একটি ওয়েবসাইট বানানো হয় (tcl.wb-gev.in)। সেখান থেকে ভুয়ো চালান বার করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথক ‘কিউআর কোড’-র সঙ্গে লিঙ্ক করে দেওয়া হচ্ছিল। ফলে রাস্তায় ওই কোড স্ক্যান করলে ভুয়ো চালান দেখা যেত।’’ পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে চারটে মোবাইল ও বেশ কয়েকটি ভুয়ো চালান বাজেয়াপ্ত করেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, “গলসিতে অভিযানে গিয়ে এক দিনে দু’টি ভুয়ো চালান পাওয়া গিয়েছিল।’’
পুলিশের দাবি, নদী থেকে বালি তোলার পরেই এজেন্টের মাধ্যমে ভুয়ো চালান তৈরির বরাত পেতেন আজহারউদ্দিন। নকল ওয়েবসাইট থেকে ভুয়ো চালান তৈরি করে কিউআর কোডের সঙ্গে ‘লিঙ্ক’ করে তা বিভিন্ন এজেন্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তার সঙ্গে আসল চালান ‘স্ক্যান’ করে গাড়ির নম্বর, বৈধ তারিখ, সময় বদলে দেওয়া হত। নতুন করে কিউআর কোড তৈরি করে ‘লিঙ্ক’ করা হত, যা সাধারণ পুলিশ বা প্রশাসনের কর্মীদের চোখে ধরা পড়া খুবই কঠিন। এসডিপিও বলেন, “আসল আর নকলের ফারাক ধরা পড়েছে ওয়েবসাইটের নাম আর কিউআর কোডের ছাপ দেখে।’’
পুলিশের দাবি, এই চক্রের ‘মাথা’ আজহারউদ্দিন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত খণ্ডঘোষ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তারপরে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নেন। গত ১৪-১৫ বছর ধরে কম্পিউটার-অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন সংস্থায় কাজও করেছেন তিনি। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি তাঁদের জানিয়েছে, ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়ো ই-চালান তৈরির বিষয়টি জানতে পেরে তা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ছ’হাজার টাকা দিয়ে অস্থায়ী ভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়ো চালান তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে মাসে একটা-দু’টো করে বরাত মিলছিল। বর্তমানে দিনে অন্তত ২০টা ভুয়ো চালান তৈরির বরাত মেলে, দাবি ধৃতের। প্রতিটি চালান পিছু রোজগার হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy