পুড়ে গিয়েছে জিনিসপত্র। শনিবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র।
আচমকা আগুন লেগে ছাই হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমানের কালনার কৈলাসপুর পশ্চিমপাড়ার ২২টি বাড়ি। শনিবার সকালের এই ঘটনায় শ’খানেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
মাঠের গা ঘেঁষে রয়েছে গ্রামের এই পাড়াটি। বেশিরভাগ বাড়ি অ্যাসবেস্টস ও টিনের চাল দিয়ে তৈরি। গ্রামবাসী জানান, এলাকায় পেঁয়াজ চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কোথাও-কোথাও চলছে পাকা ধান কাটার কাজ। সকালে পাড়ার বেশিরভাগ পুরুষ মাঠে কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দেখা যায়, একটি বাড়ির পাশে পাটকাঠির গাদায় আগুন জ্বলছে। বাতাসের ঝাপটায় সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হতভম্ব হয়ে পড়েন বাড়িতে থাকা মহিলারা। কোনওমতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। বিভিন্ন বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ফাটতে থাকে। খবর পেয়ে মাঠ থেকে ছুটে আসেন লোকজন। পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়। সাড়ে ১১টা নাগাদ দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গ্রামে পৌঁছয়। ততক্ষণে অবশ্য সব পুড়ে গিয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা।
এ দিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কেউ-কেউ ছাইয়ের মধ্যে খুঁজে চলেছেন, যদি কোনও জিনিসপত্র মেলে। অনেকে পোড়া বাড়ির ভিতর থেকে দগ্ধ টিভি, মোটরবাইক, রেফ্রিজারেটর-সহ নানা জিনিসপত্র বার করে আনছেন। বাড়ির সামনে মুদি দোকান ছিল আব্দুল আজিমের। তার স্ত্রী কচিনুর বিবি বলেন, ‘‘বাড়ির কাছে নলকূপের সামনে কাজ করছিলাম। দেখি, পাশের বাড়ি থেকে আগুনের একটি গোলা আমাদের দোকানের সামনে পড়ল। হু-হু করে দোকান, বাড়িতে আগুন ধরে গেল। কোনও রকমে ছ’বছরের ছেলে বাসিরুদ্দিনকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। দোকানের মালপত্র, ঘরে রাখা বেশ কয়েকহাজার টাকা, সোনার গয়না-সহ সব কিছু চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’’
বাড়ির সামনেই পোড়া নোটের বান্ডিল ঘাঁটছিলেন খোরসেদ শেখ। তিনি জানান, পেঁয়াজ চাষের জন্য বাড়িতে লাখ দু’য়েক টাকা রেখেছিলেন। তার বড় অংশই পোড়া অবস্থায় মিলেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এত বড় ক্ষতি হবে ভাবতে পারিনি।’’ পোড়া বাড়ির ভিতরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন নিরাস শেখ নামে এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘মাস দু’য়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। চাষের জন্য টাকা জোগাড় করতে মেয়ের কাছ থেকে ভরি দু’য়েক গয়না এনেছিলাম, তা বন্ধক দেওয়ার ভাবনায়। আগুনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে গয়না।’’ বাসিন্দারা জানান, সাইকেল, মোটরবাইক, টিভি, চাষের জন্য রাসায়নিক সার, সেচের যন্ত্র, আলমারি, খাট-সহ নানা আসবাব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫০টি মুরগি ও তিনটি ছাগলের।
এ দিন গ্রামে যান কালনা ১ বিডিও শ্রেবন্তী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রিপল, কম্বল, চাদর, ওষুধপত্র-সহ ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। যাতে পরিবারগুলি দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য এ দিনই জেলায় রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।’’ এলাকার তৃণমূল নেতা হবিবুল্লা শেখ বলেন, ‘‘পরিবারগুলির জন্য এক কুইন্টাল করে চাল, ডাল ও প্রয়োজনীয় আরও কিছু সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছি। আরও কিছু জিনিসপত্র জোগাড়ের চেষ্টা চলেছে।’’ দমকল জানায়, কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy