কুলটিতে কর্মিসভায়। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগে, দলের জেলা নেতৃত্ব এবং বিধায়কের উপস্থিতিতে কর্মিসভা। কিন্তু মঙ্গলবার সেই বৈঠকেই কুলটি বিধানসভা এলাকার ২৭ জন বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরের ১৯ জনকেই ওই বৈঠকে দেখা গেল না। এই ঘটনা ফের এলাকায় দলের কোন্দল-চিত্রকে সামনে আনল বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
এ দিন মিঠানিতে আয়োজিত ওই কর্মিসভার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, দাবি তৃণমূল সূত্রে। সেখানে যোগ দেন দলের জেলা সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, জেলা কো-অর্ডিনেটর ভি শিবদাসন-সহ অন্য নেতারা। দলের জেলা সহ-সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানান, তৃণমূলের কুলটি ব্লক নেতৃত্বকে এবং ২৭ জন কাউন্সিলরকে বৈঠকের কথা জানিয়ে এসএমএস করেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মাত্র আট জন কাউন্সিলর উপস্থিত। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে জেলা সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কাউন্সিলরদের উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।’’
যে কাউন্সিলরের এ দিনের বৈঠকে আসেননি, তাঁদের বেশির ভাগই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, যাঁরা আসেননি, তাঁদের মধ্যে দু’জন আসানসোলের প্রাক্তন পুর-প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারির অনুগামী বলে দলের অন্দরে পরিচিত। জিতেন্দ্রবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে অনুপস্থিত ওই বিদায়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন আসানসোল পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তবসসুম আরা এবং মীর কাসিম। তাঁরা দু’জনেই বলেন, ‘‘বিশেষ কাজ থাকায় যেতে পারিনি বৈঠকে। নেতৃত্বকে সেটা জানিয়েছি।’’ যদিও দলের অন্দরের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তথা সাবেক কুলটি পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়ের কথায়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘অতীতে কোনও বৈঠকেই আমাকে ডাকা হয়নি। কার্যত আমাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। তাই এ দিনও যাইনি।’’
কিন্তু কেন এই ঘটনা, তা নিয়েও জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের মধ্যে চাপানউতোর দেখা গিয়েছে। ভি শিবদাসনের দাবি, ‘‘ব্লক নেতৃত্বের আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। এ বিষয়ে বুথ স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর প্রয়োজন।’’ তবে বৈঠকে উপস্থিত কুলটির তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিমান আচার্যের দাবি, ‘‘এই সভায় যুব তৃণমূলের সদস্যদেরই মূলত দেখা গেল না। এটা অনেকাংশে ক্ষোভের প্রকাশ বলেই মনে হচ্ছে।’’ যদিও এ সব ‘তত্ত্বে’ আমল না দিয়ে বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ বলে দাবি করেছেন।
তবে বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘটনা দলের অস্বস্তি যে বাড়াল তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। কখনও পথবাতি উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উজ্জ্বলবাবু-তবসসুম, কখনও সংখ্যালঘু সেলের এক নেতাকে কেন্দ্র করে উজ্জ্বলবাবু-বিমানবাবুর ‘দ্বন্দ্ব’ এর আগে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল। কোনও ক্ষেত্রেই যদিও দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেননি নেতৃত্ব। ঘটনাচক্রে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপি ও তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তি ছিল যথাক্রমে ৫৯.০৬ ও ৩১.৩৪ শতাংশ। লোকসভা ভোটের অনতিপূর্বে এই কুলটিতেই এমনই একটি বৈঠকে দেখা যায়নি কাউন্সিলরদের বেশির ভাগকেই। সেই প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত মিশ্রের টিপ্পনী: ‘‘তৃণমূল দলটা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। দলের নেতারাই একে অপরকে বিশ্বাস করেন না।’’ দ্বন্দ্ব-কথা স্বীকার না করেও অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy