Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

মেধাতালিকায় জেলার ১০

৬৯৩ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের ছাত্র অভীক দাস। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের ছাত্র স্বস্তিক সরকার ৬৮৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম এবং ওই স্কুলেরই ছাত্র সৃজন সাহা ৬৮৭ পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০৬:০৫
Share: Save:

রাজ্যের মেধাতালিকায় পূর্ব বর্ধমান থেকেই দশ জন। মাধ্যমিকের ফলে এ বার এমনই সাফল্য জেলার। মেমারির অরিত্র পাল প্রথম হওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম— মেধাতালিকার নানা ধাপে ঠাঁই পেয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পরীক্ষার্থীরা। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘এক জেলা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পাওয়া খুবই গর্বের বিষয়। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলকেই অভিনন্দন। জেলা প্রশাসন কৃতীদের সংবর্ধনা জানাবে।’’

৬৯৩ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের ছাত্র অভীক দাস। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের ছাত্র স্বস্তিক সরকার ৬৮৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম এবং ওই স্কুলেরই ছাত্র সৃজন সাহা ৬৮৭ পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে। বর্ধমানের সিএমএস স্কুলের সৌভিক সরকার ৬৮৬ নম্বর পেয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে। কাটোয়া দুর্গাদাসি চৌধুরানি বালিকা বিদ্যালয়ের (ডিডিসি গার্লস) ছাত্রী উর্জসী মণ্ডল ৬৮৪ নম্বর পেয়ে নবম হয়েছে। ৬৮৩ নম্বর পেয়ে ডিডিসি গার্লস স্কুলেরই শ্রীপর্ণা খাসপুরী, কালনার ভৈরবনালা এসকেইউএস উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্বেষা ভট্টাচার্য, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের দেবায়ু ঘোষ এবং ভাতারের বনপাশ শিক্ষানিকেতনের ছাত্র শেখ পারভেজ জিৎ দশম স্থানে রয়েছে।

কাটোয়া শহরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা অভীক দ্বিতীয় হয়েছে, তা শোনার পরে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না বাবা শিবানন্দবাবু ও মা মানসীদেবী। একমাত্র সন্তানের পরীক্ষার ফল জানার আগ্রহে সকাল থেকেই তাঁরা বসেছিলেন টিভির সামনে। তাঁরা বলেন, ‘‘ছেলের এই সাফল্যে ও স্কুল ও গৃহশিক্ষকদের অবদান ভোলার নয়।’’ অভীক জানায়, পড়াশোনার পাশাপাশি, সে ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালবাসে। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাওয়া এই ছাত্রের আদর্শ বিধানচন্দ্র রায়। কাটোয়া কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ছাত্রেরা বরাবর মাধ্যমিকে সাফল্য পেয়ে আসছে। অভীক স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’’

মাধ্যমিকে পঞ্চম স্বস্তিক সরকার চায় মনস্তত্ববিদ হতে। সে বলে, ‘‘আমি চাই, মনের অসুখ যেন কারও না থাকে।’’ তার বাবা সুজিতবাবু গলসি ১ ব্লকের প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মী। মা বুলাদেবী বাড়িতেই থাকেন। স্বস্তিক জানায়, দিনে ঘণ্টা আটেক পড়াশোনা করত সে। পড়ার বাইরে ছবি আঁকা, গান শোনা, খেলা দেখার নেশা রয়েছে। তার সহপাঠী, মাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থানে থাকা সৃজন সাহা ফুটবল, ক্রিকেট ও ক্যারম খেলতে ভালবাসে। তার বাবা মোহিতবাবু বিমা সংস্থার কর্মী। বর্ধমান শহরের অফিসার্স কলোনির বাসিন্দা সৃজন গল্পের বই পড়তে, সিনেমা দেখতেও ভালবাসে। তার কথায়, ‘‘পড়াশোনা, খেলা, সিনেমা—সব কিছুই নির্দিষ্ট সময়ে করেছি। তাই কোনও চাপ অনুভব করিনি।’’ ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় বলে জানায় সে। মাধ্যমিকে সপ্তম সৌভিক সরকার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। পড়ার বাইরে গান শোনা তার নেশা।

কাটোয়া স্টেডিয়ামপাড়ার বাসিন্দা উর্জসীর বাবা উত্তমকুমার মণ্ডল একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা শ্রিপ্রা বিশ্বাস মণ্ডল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। উর্জসী বলে, ‘‘সারা বছরই গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। পরীক্ষার সময়ে দু’ঘণ্টা বেশি পড়তাম। বাবা-মা সব সময় সাহায্য করেছে।’’ পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় বলে জানায় সে। তার সহপাঠী, কাটোয়ার পালিটা রোডের বাসিন্দা শ্রীপর্ণার বাবা গুরুচরণ খাসপুরীও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা সবার্ণীদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে পরীক্ষার সময়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তা না হলে ফল হয়তো আরও একটু ভাল হত। তবে আমরা খুশি।’’ শ্রীপর্ণা জানায়, সে চিকিৎসক হতে চায়। কাটোয়া ডিডিসি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কবিতা সরকার বলেন, ‘‘উর্জসী ও শ্রীপর্ণার জন্য আমরা গর্বিত।’’

কালনার সুলতানপুর পঞ্চায়েতের উপলতি গ্রামের অন্বেষা ভট্টাচার্যের বাবা রামকৃষ্ণবাবু, মা পিয়ালিদেবী, দাদু শিবপ্রসাদবাবু ও ঠাকুমা বেলারানিদেবীও এ দিন সকাল থেকে টিভির সামনে বসে ছিলেন।মেধাতালিকায় অন্বেষার নাম ঘোষণা হতেই পরিজনদের চোখে জল। রামকৃষ্ণবাবু গৃহশিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামে পরিকাঠামোর অনেক অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও মেয়ে হতাশ করেনি।’’ পড়াশোনার পাশাপাশি গান, আবৃত্তিতেও ঝোঁক রয়েছে অন্বেষার। চিকিৎসক হওয়া তারও লক্ষ্য। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘স্কুল ওর সাফল্যে গর্বিত।’’

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের দেবায়ু ঘোষও দশম স্থানে রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে ছবি আঁকতে ভালবাসে ছোটনীলপুরের বাসিন্দা দেবায়ু। ভাতারের হরিবাটি গ্রামের বাসিন্দা, ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক শেখ হারুন আলির ছেলে শেখ পারভেজ জিৎও দশম হয়েছে। পারভেজ জানায়, ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় সে।

এ দিন কাটোয়ায় তিন কৃতী ছাত্রছাত্রীর বাড়ি গিয়ে ফুল-মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে আসেন কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। কালনার উপলতি গ্রামে এ দিন রাতে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অন্বেষার বাড়িতে গিয়ে নানা উপহার তুলে দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল থেকে মেয়েটির সাফল্যকে অভিনন্দন জানাই। আমরা ওর পাশে রয়েছি। ওর স্কুলকেও সাহায্য করা হবে।’’

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |

অন্য বিষয়গুলি:

Education Exam Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy