রূপনারায়ণপুরে কারখানার বন্ধ গেট। ফাইল চিত্র।
এক দশক পরে দেখা গিয়েছিল আশার আলো। কিন্তু পরপর দু’টি বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবলস কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা। লোকসভা ভোটের পরে কেন্দ্রে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে কারখানা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় কোনও প্রভাব পড়ে কি না, সে সব নিয়েই এখন তাঁদের ভাবনা। তাই ভোটের আগে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে নিশ্চিন্ত হতেন, দাবি তাঁদের।
টেলিফোনের এক বিশেষ কেবল তৈরি হত রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানায়। ১৯৫২ সালে তৈরি এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ছিল বছরে ৬৩ লক্ষ ঘন মিটার কেবল। কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে কারখানা রুগ্ণ হতে শুরু করে। সে কারণে সেটিকে বিআইএফআর-এ পাঠানো হয়। ২০০২ সালে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৩ সালে বিআরপিএসই-র হাতে কারখানাটি বাঁচানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই কারখানার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই লড়াই চলছে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বিআইএফআর এবং বিআরপিএসই-র ৩০টিরও বেশি বৈঠক হয়েছে। নানা সংস্থাকে দিয়ে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে দু’টি পুনরুজ্জীবন প্রকল্পও তৈরি করানো হয়। কিন্তু সেগুলি সরকারের পছন্দ না হওয়ায় পরে বাতিল হয়ে যায়।
কারখানার পুনরুজ্জীবনের আশা নিয়ে যখন হাল ছাড়তে বসেছেন শ্রমিক-কর্মীরা, তখনই কল্পতরুর মতো হাজির হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তাঁদের তরফে ভারী শিল্প মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এই রুগ্ণ সংস্থাটি অধিগ্রহণে রাজি। গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি এ কথা বিআইএফআরের বৈঠকেও জানিয়ে দেন কেব্লস কর্তৃপক্ষ। গত বছর ১৩ এপ্রিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং অর্ডন্যান্স বোর্ডের উচ্চ কর্তারা কেব্লস পরিদর্শনে আসেন। এখনও পর্যন্ত পাঁচ বার কারখানা ঘুরে গিয়েছেন অর্ডন্যান্স বোর্ডের কর্তারা।
কেব্লস সূত্রে জানা গিয়েছে, উভয় পক্ষের সহমতে ঠিক হয়েছে, কারখানার যাবতীয় বকেয়া ও দায় মিটিয়ে শ্রমিক-কর্মীদের একাংশকে নিয়োগ করা হবে। প্রয়োজন মতো কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। বাকিটা নিলাম করে বিক্রি করা হবে। সম্প্রতি কলকাতায় কর্পোরেট অফিসে এই নিলাম প্রক্রিয়ার দরপত্র ডাকার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সংস্থার রূপনারায়ণপুরের প্রধান বাসুদেব দে বলেন, “এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই বৈঠকে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” সংস্থা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অধিগ্রহণের বিষয়টি এখন শুধু ক্যাবিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায়। গত ২০ মার্চ বিআইএফআরের একটি বৈঠকে এই অনুমোদনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে সবাই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। তার আগে ফেব্রুয়ারিতেও একটি বৈঠক বাতিল হয়ে গিয়েছে। কী কারণে বৈঠক হয়নি, কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি।
এরই মধ্যে এসে গিয়েছে ভোট। কারখানার সাধারণ কর্মী থেকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, সকলেই চান অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া যাতে থেমে না যায়। এই কারখানার প্রধান বাসুদেববাবু বলেন, “না আঁচানো পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। তবে আমরা আশাবাদী।” সিটু নেতা প্রদীপ সাহার মতে, “লোকসভা ভোটের আগে প্রক্রিয়াটি শেষ হলেই ভাল হত। কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পরে কী হবে, জানি না!” আইএনটিইউসি নেতা উমেশ ঝা-র কথায়, “আমরা আশাবাদী হলেও লোকসভা ভোটের পরে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, সে নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা তো থাকছেই।”
অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় শুধু কর্মীদের মনোবল কমাই নয়, পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কারখানার জিনিসপত্র। কারখানা চত্বরে বাড়ছে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy