Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রতারণায় অভিযুক্ত আরও এক লগ্নি সংস্থা

আরও এক বেসরকারি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। কয়েক জন আমানতকারী অভিযোগ করেন, সংস্থার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রেখে তাঁরা বছরখানেকের বেশি সময় ধরে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না স্থায়ী আমানতেও। সম্প্রতি দুর্গাপুর থানায় ওই আমানতকারীরা লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সংস্থার দুর্গাপুরের কার‌্যালয় তালাবন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কলকাতার প্রধান কার‌্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

আরও এক বেসরকারি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। কয়েক জন আমানতকারী অভিযোগ করেন, সংস্থার ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রেখে তাঁরা বছরখানেকের বেশি সময় ধরে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না স্থায়ী আমানতেও। সম্প্রতি দুর্গাপুর থানায় ওই আমানতকারীরা লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সংস্থার দুর্গাপুরের কার‌্যালয় তালাবন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কলকাতার প্রধান কার‌্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কাঁকসার দেউল পার্ক ‘লিজ’ নিয়ে প্রথম দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ব্যবসা শুরু করে ওই সংস্থাটি। কাঁকসার জঙ্গলের মাঝে অজয় নদের ধার ঘেঁষে রয়েছে ‘ইছাই ঘোষের দেউল’। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মতে, দেউলটি গড়ে তোলা হয়েছিল মধ্যযুগের শেষদিকে। ইটের তৈরি এই দেউলটি ‘সংরক্ষিত’ বলে ঘোষিত। দেউল ও লাগোয়া ৮১ একর জায়গা নিয়ে নব্বই দশকের শুরুর দিকে জেলা পরিষদ গড়ে তোলে ‘দেউল পার্ক’। পরিচালনার দায়িত্বে ছিল স্থানীয় বনকাটি পঞ্চায়েত। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় মানুষজন তেমন আসতেন না। ২০০৬ সালে পঞ্চায়েত পার্কটি ৩০ বছরের জন্য ‘লিজ’ দেয় ওই সংস্থাকে।

পার্কে রিসর্ট, কনফারেন্স রুম, লেক, আর্ন্তজাতিক মানের গোলাপ বাগিচা, মুক্ত মঞ্চ, সঙ্গে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি-পশুপালন, ডেয়ারি শিল্প গড়ে তোলে সংস্থা। বদলে যাওয়া নতুন পার্কে বছরভর ভিড় লেগে থাকে। ব্যবসা আরও বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় লগ্নি জোগাড় করতে ২০০৮ সাল থেকে বেসরকারি আর্থিক সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে সংস্থাটি। ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং স্থায়ী আমানত প্রকল্পে বাজার থেকে টাকা তুলতে শুরু করে তারা। টিভি চ্যানেলও খোলে। দুর্গাপুরের বেনাচিতির জে কে পাল গলিতে শাখা কার‌্যালয় খোলে সংস্থাটি।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অনেকেই ওই সংস্থায় লগ্নি করেন। প্রথম প্রথম আমানত নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত পেতেন তাঁরা। অভিযোগ, সমস্যার শুরু গত বছরের জুন-জুলাই থেকে। আমাতনকারী কানাইলাল মল্লিক জানান, তিনি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে পাঁচশো টাকার তিনটি রেকারিং ডিপোজিট খুলেছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিটি থেকে ৪০ হাজার ৯২৫ টাকা করে মোট ১ লক্ষ ২২ হাজার ৭৭৫ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। কানাইলালবাবুর অভিযোগ, “বেনাচিতি কার‌্যালয়ের মাধ্যমে আমি লগ্নি করেছিলাম। এখন তো সেই কার‌্যালয়ই বন্ধ। আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে সংস্থাটি।” আর এক লগ্নিকারী সিঞ্চন ঘটকের অভিযোগ, “আমি ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ১ লক্ষ টাকা স্থায়ী আমানতে লগ্নি করেছিলাম। মাছ চাষে সে টাকা লগ্নি করে তিন বছরের মাথায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার পাঁচশো টাকা দেওয়ার কথা ছিল ওই সংস্থা। কিন্তু তা পাইনি।” তিনি আরও দাবি করেন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে তিন বছরের জন্য একই সময়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা লগ্নি করেছিলেন। প্রতি মাসে বারোশো টাকা হারে ফেরত পাওয়ার কথা। গত বছর ডিসেম্বরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। সিঞ্চনবাবু বলেন, “শেষ কয়েক মাস টাকা পাইনি। মেয়াদ শেষের টাকাও মেলেনি।” রাখাল চিত্রকর নামে আর এক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে ৬ বছরের জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন। মাসে ২ হাজার ২৫০ টাকা হারে ফেরত পাওয়ার কথা। তাঁর কথায়, “গত বছরের জুলাই থেকে টাকা ফেরত পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” এমন অভিযোগ করেছেন আরও অনেক লগ্নিকারী।

সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রবিবার দাবি করেন, “আমরা কোথাও একেবার টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করিনি। কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মিত হয়েছে। আজই আমাদের বৈঠক হয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝি নোটিস দিয়ে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

fraud cheat fund agency subrata shit durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy