দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।
ঠান্ডাটা পড়েছে জাঁকিয়ে। সেই সঙ্গে পড়ে গিয়েছে ছুটিও। চড়ুইভাতি আর বেড়ানোর জন্য এর থেকে ভাল দিন আর কী-ই বা হতে পারে! বৃহস্পতিবার বড়দিনে তাই শিল্পাঞ্চলের নানা পিকনিকের জায়গা ও পার্কে নামল মানুষের ঢল। কোথাও দামোদরে নৌকাবিহার, কোনও পার্কে আবার হরেক রকম রাইড মেতে উঠলেন সব বয়সের মানুষজনই।
স্কুল-কলেজ-অফিসে ছুটি থাকায় অনেকেই বাইরে বেড়াতে চলে গিয়েছেন। যাঁরা শহরে রয়েছেন, ছুটির মেজাজে দিন কাটাতে নানা পরিকল্পনা কষে এ দিন সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়েছিলেন তাঁরাও। দুপুরে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার লাগোয়া পার্কটিতে গিয়ে দেখা গেল, তিলধারণের জায়গা নেই। কচিকাঁচা থেকে মাঝবয়সী, সবাই মেতে উঠেছেন বড়দিনের আনন্দে। বাড়তি মজা যোগ করেছে ট্রয় ট্রেন। শহরের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া স্নিগ্ধা গড়াই জানায়, বড়দিন থেকে ফের শিলিগুড়ি-দার্জিলিং টয় ট্রেন চালু হবে, এই খবর শুনে খুব খুশি হয়েছিল সে। কাকুর কাছে লম্বা রাস্তা টয়ট্রেনে ভ্রমণের গল্প শুনেছিল। অথচ, গত বছর সে যখন দার্জিলিঙয়ে গিয়েছিল, তখন টয়ট্রেনে চড়ার টিকিটই পায়নি। সেই খেদ মিটিয়ে নিতে জানুয়ারিতেই দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাবার কাছে জেদ ধরেছিল স্নিগ্ধা। কিন্তু আপাতত শিলিগুড়ি থেকে টয়ট্রেন চালুর সম্ভাবনা নেই শুনে তার আবার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। এ দিন পার্কের টয়ট্রেনে চড়ে স্নিগ্ধা বলে, “দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নিলাম।”
ও দিকে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে অনেকেই নেমে পড়েছিলেন ‘ওয়াটার রাইডিং’য়ে। মেতে উঠেছেন ‘ওয়াটার বল’-এর মতো নানা খেলায়। খুদে থেকে বড়, যে কাউকে বড় বেলুনের মধ্যে ভরে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে জলে। জলের মধ্যে ডুবেও যেন ভেসে থাকা! আর তা পেয়ে জল থেকে যেন উটে আসতে চাইছেন না কেউই। ইস্পাতনগরীর মাঝে শহরের ভিতরের পার্কটিতেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। নানা রঙের ফুলে ঘেরা ঘনসবুজ পার্কে নৌকাবিহার, খুদেদের নানা রাইডে মেতেছিলেন অনেকেই। অনেকে বনভোজনও করেন। কেউ বা পার্কে ঘুরতে এসে রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়েছেন। এই পার্কের প্রধান আকর্ষণ ‘মিউজিক্যাল ফাউন্টেন’। তা দেখতে বিকেলের পরে ভিড় আরও বাড়ে।
বড়দিন উপলক্ষে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই শহর সাজতে শুরু করেছিল। বুধবার রাত থেকে যেন আলোর মেলা উঠেছিল আসানসোল ও লাগোয়া এলাকা। দুর্গাপুরেও সিটি সেন্টার, বিধাননগরের গির্জাগুলি সেজে ওঠে। সন্ধ্যায় গির্জার সামনে ছিল বহু মানুষের ভিড়। এ দিন সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে মাইথনে। শুধু এই শিল্পাঞ্চলের মানুষজনই নন, দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে বাস-গাড়ি নিয়ে সেখানে আসেন। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বরাকর নদের দু’পাশে কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। অনেকে বাড়ি থেকেই খাবার এনেছিলেন। আবার অনেকে সেখানে রান্নাবান্না করেছেন। অশান্তি এড়াতে সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। বার্নপুরের নেহরু পার্কেও বেশ ভিড় হয় এ দিন। ইস্কোর তত্ত্বাবধানে থাকা এই পার্কে আগে থেকেই পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছিল। পরিযায়ী পাখি দেখতে চিত্তরঞ্জনের ঝিলগুলিতেও ঢুঁ দেন অনেকে। সকাল থেকে ছোট-বড় গাড়িতে করে হাঁড়ি, কড়াই, সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে কাঁকসার দেউল পার্ক, আউশগ্রামের ভাল্কি মাচানের দিকেও যাত্রা করতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকে। দামোদরের ব্যারাজের ধারেও অনেকে বনভোজন সেরেছেন।
শুধু পার্ক বা পিকনিকের জায়গা নয়, বড়দিন উপলক্ষে সেজে উঠেছে শপিংমলগুলিও। সুন্দর করে সাজা আসানসোলেও শপিংমলগুলিতে এ দিন তরুণ-তরুণীদের ভিড় জমাতে দেখা যায়। দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের পাশের শপিংমলটি বিকেল থেকেই জমজমাট। কলেজ পড়ুয়া অনুভব দাস, তুলিকা রাইরা বলেন, “আগে অন্য শহরে যে সব বড় বড় ব্র্যান্ডের খাবারদাবার মেলে বলে শুনে এসেছি, এ বার আমাদের শহরেই সে সব হাতের মুঠোয়। চুটিয়ে মজা ও খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে।” শহরের সিটি সেন্টারের অন্য একটি শপিংমলেও ভিড় ছিল রীতিমতো। একই ছবি নজরে এসেছে বেনাচিতির শপিংমলটিতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy