বন্ধ কাউন্টার।
কর্মী কম থাকায় পরিষেবা শিকেয় দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের প্রধান ডাকঘরে। দীর্ঘক্ষণ লম্বা লাইনে অপেক্ষা করেও কাজ না সেরে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। ফলে, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
পোস্টমাস্টার চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানান, চার জন কর্মীর মধ্যে দু’জনকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছে। তাই এমন পরিস্থিতি। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে আসানসোল বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টিন্ডেন্ট অমিত লাহিড়ি সাফ জানান, নতুন কর্মী দেওয়া যাবে না। বর্তমান কর্মীদের নিয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
সিটি সেন্টারের এই ডাকঘরটিতে ডাক বিভাগের নিয়মিত কাজকর্ম ছাড়াও মানি অর্ডার, স্বল্প সঞ্চয়, টার্ম ডিপোজিট, এমআইএস থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, পোস্টাল লাইফ ইনসিওরেন্স, পোস্টাল অর্ডার বিক্রির মতো কাজকর্ম হয়। ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন গড়ে শ’দুয়েক স্পিড পোস্ট ও রেজিস্ট্রি ডাকের বুকিং হয় এখান থেকে। বরাবর তিনটি কাউন্টার চালু ছিল। তার মধ্যে দু’টিতে আর্থিক কাজকর্ম হত। অন্যটিতে বাকি কাজ সারা হত। পোস্টমাস্টার বাদে চার জন পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (করণিক) ছিলেন।
পরিষেবা পেতে অপেক্ষা।
সমস্যার শুরু গত অক্টোবর থেকে। এক জন করণিককে দুর্গাপুর প্রধান ডাকঘরে পাঠিয়ে দেয় ডাক বিভাগ। কোনও রকমে বাকিরা তাঁর কাজ সামলে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এপ্রিলে ডাক বিভাগের নির্দেশ মতো আরও এক কর্মী বদলি হয়ে চলে যান মেনগেট ডাকঘরে। ফলে করণিকের সংখ্যা আগের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন বাকি কর্মীরা। দু’জনে তিনটি কাউন্টার সামলাতে হয় তাঁদের। সাহায্যের হাত বাড়াতেন পোস্টমাস্টারও। কিন্তু তাতে কাজকর্মের অসুবিধা হচ্ছিল বলে গত শুক্রবার থেকে একটি কাউন্টার বন্ধ করে সেই কাজ বাকি দু’টিতে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান পোস্টমাস্টার চিন্ময়বাবু। বৃহস্পতিবার ডাকঘরে গিয়ে দেখা গেল, দুই করণিক একটি করে কাউন্টার সামলাচ্ছেন। পোস্টমাস্টার চিন্ময়বাবু ঘুরে ঘুরে বাকি কাজ সারছেন। তিনি বলেন, “তিনটি কাউন্টার চালাতে হলে আমাকেও কাউন্টারে গিয়ে বসতে হয়। তা হলে বাকি কাজ সামলাবে কে?”
এ দিন সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টির জন্য কাউন্টারের সামনে তেমন ভিড় ছিল না। তবু তারই মাঝে ননকোম্পানি এলাকা থেকে আসা প্রবীণ বাসিন্দা সুনন্দ রায় চিৎকার জুড়ে দিলেন। তিনি এমআইএস সংক্রান্ত কিছু তথ্যের খোঁজে এসেছিলেন। কিন্তু দুই করণিক পোস্টাল অর্ডার বিক্রি, মানি অর্ডার করা, স্পিড পোস্ট, রেজিস্ট্রি ডাকের বুকিং, স্বল্পসঞ্চয়ের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পোস্টমাস্টার চিন্ময়বাবু এগিয়ে গেলে সুনন্দবাবু তাঁকে স্পষ্ট জানান, কর্মী আছেন কি নেই তা গ্রাহকদের জানার বিষয় নয়। তাঁরা পরিষেবা চান। চিন্ময়বাবুও বলেন, “গ্রাহকেরা তো পরিষেবাই চাইবেন। আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা তাঁরা শুনবেন কেন!” সেল কো-অপারেটিভ এলাকার যুবক তুষার মুখোপাধ্যায় স্পিড পোস্ট করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে চলে গিয়েছি কত বার। সমস্যা যে কবে মিটবে জানি না।” একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া সৌম্যদীপ গড়াই, সৌমিলি রায়েরা বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার জন্য আমাদের মাঝে মাঝেই ইন্ডিয়ান পোস্টাল অর্ডার কিনতে হয়। সেই সব দিনগুলিতে আমাদের মতো আরও অনেকে আসেন পোস্টাল অর্ডার কিনতে। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।”
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারের এই ডাকঘরে কাজের যা বহর, বহু ডাকঘরে তেমন নেই। তবু নতুন কর্মী দেওয়ার ব্যাপারে কোনও হেলদোল নজরে আসছে না। কেন? আসানসোল বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অমিত লাহিড়ি অবশ্য এই ডাকঘরে কর্মী সঙ্কটের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “যা নিয়ম সেই মতোই কর্মী রয়েছেন ওখানে। নতুন কর্মী দেওয়ার প্রশ্ন নেই।” উল্টে, একটি কাউন্টার বন্ধ রাখার জন্য পোস্টমাস্টারের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy