কল্যাণপুর শিল্পতালুকে ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের বাক্স। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্পাঞ্চলেই বেহাল একের পর এক শিল্পতালুক। কোথাও রাস্তা বেহাল। কোথাও আলো নেই। কোথাও নিকাশির সমস্যা। বণিক সংগঠনের সভায় এসে রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই সব শিল্পতালুক নিয়ে কিছু আলোকপাত করবেন, আশা করেছিলেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নির্বাচনী বিধির কথা বলে মন্ত্রী এ নিয়ে কোনও বক্তব্য না রাখায় খানিকটা হতাশ তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জে দু’টি বণিক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু। অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ কৃষি, শিল্পে কতটা এগিয়ে, সে সবের ফিরিস্তি দেন। স্থানীয় কিছু দাবি-দাওয়ার কথা তাঁকে জানান সভায় উপস্থিত সদস্যেরা। তাঁদেরই কয়েক জনের দাবি, যার উপরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভরশীল, সেই শিল্পতালুকগুলির বেহাল পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তাঁরা তোলার চেষ্টা করলেও মন্ত্রী পাশ কাটিয়ে যান।
এই শিল্পাঞ্চলে যে ক’টি শিল্পতালুক রয়েছে, তার কোনওটির উন্নয়নে প্রশাসনিক উদ্যোগ কখনও হয়নি বলে অভিযোগ শিল্পপতিদের। তাঁদের মতে, শিল্প গড়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বণ্টন করেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। শিল্প সহায়ক পরিকাঠামোর উন্নয়ন করাও জরুরি। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অভিযোগ, বামফ্রন্ট ও বর্তমানে তৃণমূলের সরকারদুই আমলেই এই বিষয়টি অবহেলিত রয়েছে। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান অভিযোগ করেন, মঙ্গলপুর শিল্পতালুকটির কোনও উন্নয়ন হয়নি। রাস্তা, নর্দমা, আলো, পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা ছাড়াই শিল্পতালুক গড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই সমস্যাগুলির কথা অনেকেই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী উৎসাহ না দেখানোয় সব বলা সম্ভব হয়নি দাবি করে শুক্রবার রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবুর অভিযোগ, “পরিকাঠামো উন্নয়নের অভাবে সিমেন্ট শিল্প মার খেয়েছে। নতুন শিল্প গড়তে ভয় পাচ্ছেন শিল্পপতিরা। মন্ত্রীকে অনেক কিছুই জানানো গেল না। আমরা এই আলোচনায় হতাশ।” তাঁর আরও দাবি, এই অঞ্চলে শিল্পের প্রসারে শিল্পপতিদের আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়ার প্রয়াস সরকারের তরফে তেমন ভাবে চোখে পড়েনি।
একই রকম অভিযোগ জামুড়িয়া থেকে আসা শিল্পপতিদেরও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনই এক জনের অভিযোগ, “আমরা এই সভা থেকে কোনও দিশা পেলাম না।” জামুড়িয়া বণিকসভার কর্ণধার অজয় খেতান বলেন, “প্রায় হাজার একর জায়গা জুড়ে শিল্পতালুক হয়েছে। অনেকেই উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু সরকার এখনও শিল্পতালুকের নোটিফিকেসন জারি করেননি। তাই শিল্পপতিরা কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে, উৎসাহ হারাচ্ছেন।” বৃহস্পতিবার আলোচনায় ছিলেন আসানসোলের কল্যাণপুর শিল্পতালুকের ব্যবসায়ীরা। তাঁদেরই এক জন তথা আসানসোল ইন্ডাস্ট্রিয়াল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি অধীর গুপ্ত বলেন, “আমরা এখানকার পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা বলার সুযোগ হয়নি। অগত্যা লিখিত আকারে মন্ত্রীর হাতে দিয়েছি। যে আশা নিয়ে গিয়েছিলাম তা পূরণ হয়নি।” অধীরবাবু অভিযোগ করেন, এটি নামেই শিল্পতালুক। রাস্তা নেই, আলো জ্বলে না। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। রোজ চুরি হয়। নিরাপত্তা বলে কিছুই নেই। পুলক দাস নামে আর এক ব্যবসায়ীর দাবি, “পরিকাঠামোর উন্নয়ন না হলে এখানে সংস্থা চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।”
বৃহস্পতিবারের সভায় ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক। তিনি অবশ্য বলেন, “সভায় শিল্পপতিদের তরফে শিল্পতালুকের পরিকাঠামোর প্রসঙ্গটি সে ভাবে ওঠেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় শিল্পোন্নয়নের কাজ পুরোদমে চলছে। ভোটের পরে ফের যাবতীয় উদ্যোগ হবে।” সভায় থাকা রাজ্যের আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিছু দাবি জানিয়েছিলেন। তা শোনা হয়েছে। নির্বাচনী বিধির জন্য এখনই এ নিয়ে কোনও কথা বলা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy