(বাঁ দিকে) অর্ণব দাম। গৌতম চন্দ্র (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
জেলবন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম যাতে গবেষণা করতে পারেন, তা নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা রয়েছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। তাঁর দাবি, বিষয়টি নিয়ে অকারণে ‘জলঘোলা’ করা হচ্ছে। উপাচার্য আশা প্রকাশ করেছেন, তাঁর তোলা প্রশ্নের জবাব শীঘ্রই দেবেন হুগলির জেল সুপার। অর্ণবের গবেষণায় ‘বাধা’ দেওয়া নিয়ে তাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। উপাচার্য শুক্রবার দাবি করেছেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ কেউ কুণালকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
অর্ণবের গবেষণার সংক্রান্ত বিষয়ে দু’টি প্রশ্ন করে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন বলে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন উপাচার্য। ওই চিঠিতে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, জেলবন্দি নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য এলে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কারা দেখবেন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে গৌতম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। সেই পরিকাঠামোও নেই।’’ চিঠিতে তিনি আরও জানতে চেয়েছিলেন যে, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না। এই প্রসঙ্গে গৌতম বলেন, ‘‘চিঠি দিয়ে কারা দফতরের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ শুধু জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি যথেষ্ট নয়। কোর্টের নির্দেশ রয়েছে কি না, তা-ও দেখে নেওয়া হয়েছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ প্রথম থেকেই অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে ছিল। তাদের আপত্তি নেই বলেই জানিয়েছিল। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, মাওবাদী নেতা অতীতে একে-৪৭ হাতে ঘোরাফেরা করতেন। তাঁর ভাবাদর্শের প্রভাব অন্য পড়ুয়াদের উপর পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘‘এটা আমার ভাবার বিষয় নয়।’’ তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, অর্ণবকে নিয়ম মেনে ক্লাসে আসতে হবে। লাইব্রেরিতেও আসতে হবে। সে সব কারণেই তিনি হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন।
এর আগে তৃণমূল নেতা কুণাল অভিযোগ করেছিলেন, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে বাধা দিচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ মানেননি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ কুণাল ঘোষকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধাবান।’’ অর্ণবকে ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে নিজের ‘সদিচ্ছা’র কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাকি ৩৮টি বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। ইন্টারভিউয়ে এক নম্বরে থাকা অর্ণবকে বাদ দিয়ে ইতিহাসে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই না বলেই সরকারের উত্তরের জন্য দু’-একদিন অপেক্ষা করা হচ্ছে।’’ তিনি এ-ও জানান, অর্ণব যেহেতু সংশোধনাগারে রয়েছেন, তাই কারা কর্তৃপক্ষের ‘নো অবজেকশন’ দরকার। তিনি আঙুল তুলেছেন পূর্বতন উপাচার্যের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘পূর্বতন উপাচার্য এই ধরনের বিষয়গুলি ইসি (এগজিকিউটিভ কমিটি)-র দিকে ঠেলে দিতেন। সদিচ্ছা আছে বলেই আমি তা করিনি।’’
অন্য দিকে, শুক্রাবারই আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজ্যের কারামন্ত্রী জানিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠির জবাব সোমবারই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘চিঠি দিয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের কোনও সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা মতোই সবটা করা হবে। আমাদের পক্ষে কোনও সমস্যা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা, যাঁরা পড়তে চান, তাঁদের পড়তে দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy