পুনর্নির্মাণ: বেনাচিতির বহুতলে রাজীব কুমার। ছবি: বিকাশ মশান
গায়ে লাল শার্ট, কালো প্যান্ট। বহুতলের লিফটে চড়ে গুটি গুটি হাঁটা দিলেন শিল্পা অগ্রবাল হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার। সঙ্গে পুলিশ। আর তার পরেই বাঁকুড়ার মেজিয়ার যুবতী শিল্পাকে খুন, ট্রলিব্যাগ কিনে দেহ লোপাটের চেষ্টা-সহ নানা ঘটনার পুনর্নির্মাণ। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, শনিবার এই খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণের ফলে রাজীবের বয়ানের বেশ কিছু যে অসঙ্গতি মিলেছিল,তা কেটে গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় রাজীবের স্ত্রী মনীষা পুলিশে ফোন করে বলে, ‘আমাদের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে স্যুইসাইড করেছে।’ ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল বেনাচিতির একটি বহুতলের ‘৪বি’ নম্বরের ওই ফ্ল্যাটে। করিডরে লিফটের সামনে একটা ছোট ঘর থেকে উদ্ধার হয় নতুন কেনা ট্রলিব্যাগে বন্দি শিল্পার দেহ। গ্রেফতার করা হয় রাজীব ও মনীষাকে।
পুলিশের দাবি, দীর্ঘ জেরার শেষে অবশেষে রাজীব স্বীকার করে, শিল্পাকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে সে খুন করে। কিন্তু কী ভাবে খুন, কেনই বা খুন, খুনের আগেপরের ঘটনা পরম্পরা কী, তা নিয়ে রাজীবের কথায় বেশ কিছু ধন্দ তৈরি হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। কী কী তা? তদন্তকারী এক অফিসার জানান, কখনও রাজীব জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটে তিনি একাই ঢুকেছিলেন। আবার পর মুহূর্তেই জানিয়েছেন, একা নয়, শিল্পাকে সঙ্গে নিয়ে ঢোকেন। মদ, খাবার কিনতেও দু’জনে এক সঙ্গে গিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়। তা ছাড়া রাজীব যে যে ‘সময়’-এর কথা বলছিলেন, তা-ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে মিলছিল না।
এই সমস্ত বিষয়ে ধন্দ কাটাতেই পুলিশ ঘটনার পুনর্নির্মাণ করায়। সেই মতো, এ দিন সন্ধ্যায় রাজীবকে নিয়ে ওই বহুতলে পৌঁছয় পুলিশ। ‘৪বি’ নম্বরের ওই ফ্ল্যাটের দরজার সামনে যেতেই তার হাতে তুলে দেওয়া হয় ফ্ল্যাটের চাবি। নিজেই চাবি খোলেন রাজীব। প্রথমে ড্রয়িংরুমে ঢোকেন তিনি। তার পরে একে একে কোথায় মদ্যপান করা হয়, কোথায় ঘুমোতে যান, কী ভাবে খুন করা হয়— সে সবই দেখায় রাজীব। দেখায়, কোথায় বিকল রেফ্রিজেরেটরে ঢুকিয়ে রাখা হয় শিল্পার দেহ, তা-ও। প্রায় ৩০-৪০ মিনিটের মতো ওই পুনর্নির্মাণের পরে রাজীবকে নিয়ে যাওয়া হয়, লাগোয়া শপিং মলের একটি মদের দোকানে। পুলিশ জানায়, ওই দোকান থেকেই বিদেশি মদ কেনেন বলে জানান রাজীব। এর পরে সেই দোকানে রাজীবকে নিয়ে যায় পুলিশ, যেখান থেকে ট্রলি-ব্যাগটি কেনা হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, দোকানের তরফে রাজীবকে চিহ্নিত করা হয়। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ট্রলি-ব্যাগ কিনলেও, তার বিল করানোর সময়ে নিজের নাম বলে বলেন, ‘রাজেশ কুমার।’ বিল অনুযায়ী, ওই ব্যাগের দাম, সাত হাজার টাকা। কেনা হয়, গত মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটা নাগাদ।
পুলিশের দাবি, এ দিনের পরে তাঁরা নিশ্চিত, শিল্পাকে নিয়েই রাজীব ফ্ল্যাটে ঢোকে। তাই বহুতলের রেজিস্ট্রারে সইও নেই শিল্পার। কারণ, ওই বহুতলের নিয়ম অনুযায়ী অপরিচিত কেউ ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে এলে তাঁকে সই করতে হয় না। তদন্তকারীদের আরও দাবি, মদ ও খাবার কিনতে একাই গিয়েছিল রাজীব।
তবে ঘটনার প্রতিটি পর্বের ঠিক ‘সময়’টি কখন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়। সিসিটিভি ফুটেজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। কারণ, ওই বহুতলের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। এমনকী রাজীবের ফ্ল্যাটের করিডরের উল্টোদিকেও সিসি ক্যামেরা রয়েছে।ইতিমধ্যেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ দিন পুরো ‘সিসিটিভি ডিভাইসটি’ই নিয়ে যায় পুলিশ। রানিগঞ্জে রাজীবের ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া শিল্পার মোবাইলের কললিস্ট এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দু’জনের কথোপকথনও খুঁটিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে এ দিনও আতঙ্ক কাটেনি বহুতলের বাসিন্দাদের। যেখান থেকে ট্রলিব্যাগবন্দি শিল্পার দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তারই উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সনাতন মণ্ডল বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ভয়ে দরজাও খুলতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy