এমন ‘ভূত’-এর খোঁজেই হানা দিয়ে ১৭৭টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রতীকী ছবি।
কেবল বেনামেই নয়, সিউড়িতে বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে মৃত ব্যক্তির নামেও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠল।
সিউড়ি-২ ব্লকের পিয়াসারা গ্রামের বাসিন্দা ভগীরথ ঘোষের অভিযোগ, তাঁর ভাই গোপাল ঘোষ তিন বছর আগেই মারা গিয়েছেন। জীবিত থাকাকালীনও কোনও ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট ছিল না। অথচ তাঁরা জেনে অবাক হয়ে গিয়েছেন যে, সমবায় ব্যাঙ্কে গোপালের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কী ভাবে চলছে সেই অ্যাকাউন্ট? ভগীরথের জবাব, ‘‘মনে হয় ভূতে সই করে টাকা তুলছে!’’
এমন ‘ভূত’-এর খোঁজেই হানা দিয়ে ১৭৭টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শুক্রবারও ওই শাখার বর্তমান ও প্রাক্তন ম্যানেজারকে নিজাম প্যালেসে ডাকে সিবিআই। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফের তাঁদের তলব করা হবে বলে জানান তদন্তকারীরা। যদিও এ দিন কেন্দ্রীয় সমবায় কর্তৃপক্ষের দাবি ‘বেনামি’ অ্যাকাউন্ট’ বলে কিছু হয় না। নথি ছাড়া কি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব? তবে কেওয়াইসি সংক্রান্ত কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে বলে তাঁদের দাবি।
বাস্তব অবশ্য অন্য কথা বলছে। সূত্রের খবর, ‘ভুয়ো’ অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে যাঁদের নাম ও ঠিকানা মিলে যাচ্ছে, তাঁদের অনেকেই জানান, এই অ্যাকাউন্টের কথা তাঁরা জানতেনই না। কোনও নথি তাঁরা ব্যাঙ্ক-কে দেননি। অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদনপত্রে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটাও তাঁদের নয় বলে দাবি। তেমনই কিছু নম্বরে ফোন করে দেখা গিয়েছে, অনেকে বীরভূমের বাসিন্দাই নন!
সিউড়ি-২ ব্লকের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মুর্মুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিয়েছে সিবিআই। সুনীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ছেলে রবীনের দাবি, ‘‘বাবা ১০০ দিনের কাজের জন্য সমস্ত নথি দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই কেউ নথি জাল করতে পারে।’’ পুরন্দরপুর পঞ্চায়েতের সুন্দরী বাস্কির দাবি, তিনি কোনও দিন কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে যাননি, নথিও দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আবাস যোজনার বাড়ি পেতে এবং দুয়ারে সরকারে নথি জমা দিয়েছিলাম। সেই নথি দিয়ে অ্যাকাউন্টটা খোলা হল কিনা, জানি না।’’ একই দাবি মমতা মৃধা কিংবা কৃষ্ণ মুর্মুর।
ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক মানছেন, ব্যাঙ্কের ‘স্বাস্থ্য’ পুনরুদ্ধারে শিবির করে গ্রাহক টানতে হয়েছে। তখন বেনামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘তথ্য ভুল দিয়ে থাকলে শিবিরে সবটা যাচাই সম্ভব নয়। তবে সিবিআই যে অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখে নথি সংগ্রহ করেছে, সেগুলিতে ধান সংগ্রহ সংক্রান্ত বেশ কিছু লেনদেন হয়েছে। সবই ডিজিটাল বা নেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে।’’
রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘এগুলি (সমবায় ব্যাঙ্ক) রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং যা ব্যবস্থা নেওয়ার, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নেবে।’’
যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘আগে তো এক জনের নামে কোটি কোটি টাকা জমা পড়েছে। তখন ব্যাঙ্কের কর্তারা কোনও প্রশ্ন করেননি, কোনও তথ্য দেননি।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এখানে বালি, কয়লা না গরু পাচারের টাকা রাখা হয়েছে, সে কথা বলতে পারবেন তিনি, যিনি অনুব্রতকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়েছেন!’’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘তদন্ত সিবিআই দেখছে। তবে এত কিছু পাওয়া গেলে মনে পড়ে, কবিগুরুর চুরি যাওয়া নোবেল এবং এফআইআর-এ নাম থাকা শুভেন্দু অধিকারীর কথা! এই দু’টো বিষয়ে তারা কোনও সূত্র দিতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy