সুজাপুর মোড়ে পর পর জ্বলছে পুলিশের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
গোটা রাজ্যে বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির মধ্যেই বুধবারের ভারত ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মালদহ জেলার সুজাপুর। তবে, ওই অশান্তি কতটা ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ওই জমায়েতের অধিকাংশ মানুষের হাতেই ছিল এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী প্ল্যাকার্ড ।
রাস্তা অবরোধ করে থাকা কয়েক হাজার মানুষকে জাতীয় সড়ক থেকে সরাতে গেলে প্রথমে বচসা, তার পর হাতাহাতি শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে। এর পরই পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অন্তত ছ’টি পুলিশের গাড়ি, ভাঙচুর করা হয় পুলিশ এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক গাড়িতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাল্টা পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস এবং রবার বুলেট পর্যন্ত চালাতে হয়। পরিস্থিতি দেখে গঙ্গাসাগর থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বন্ধের নামে কোনও গুন্ডামি সহ্য করা হবে না। পুলিশ যে কোনও হিংসার চেষ্টা বা জোর জুলুম কড়া হাতে মোকাবিলা করবে।
ঘটনার সূত্রপাত, বুধবার দুপুরে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরন (এনআরসি) বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর জমা হন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডেও ছিল এনআরসি-এনপিআর বিরোধী লেখা। জাতীয় সড়কে আটকে পড়ে প্রচুর গাড়ি। পুলিশ পৌঁছে অবরোধকারীদের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করেন। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পদমর্যাদার এক আধিকারিক অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন।
কিন্তু সেই অনুরোধে কোনও কাজ হয় না। উল্টে মারমুখী হয়ে ওঠে জমায়েতের একাংশ। সেই জনতাকে শান্ত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের অভিযোগ, মূহূর্তের মধ্যে জমায়েতের মধ্যে থেকে এলোপাথাড়ি ইট উড়ে আসতে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। জেলার এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘শুধু ইট এবং রাস্তার পাথর নয়, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাও মারা হয় জমায়েত থেকে।” তার মধ্যেই জনতার একাংশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিকের এসএউভি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সরকারি বাসও।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পৌঁছয় জেলা সদর থেকে। পৌঁছয় র্যাফ এবং কমব্যাট বাহিনীও। বেলা দেড়টা নাগাদ প্রথমে পুলিশ লাঠি চালিয়ে মারমুখী ওই জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয় না। পুলিশের তুলনায় বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় পুলিশ সংখ্যালঘু হয়ে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অতিরিক্ত বাহিনী এর পর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ওই জমায়েতকে খানিকটা পিছু হটতে বাধ্য করে। কিন্তু জাতীয় সড়তের দু’পাশ থেকে বৃষ্টির মতো পুলিশকে লক্ষ্য করে ধেয়ে আসে পাথর। এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘এর পর কয়েক রাউন্ড রবার বুলেট চালানো হয়।’’
লাঠি চালিয়ে জমায়েত সরানোর চেষ্টা পুলিশের — নিজস্ব চিত্র
এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ধর্মঘটকে সামনে রেখে সিএএ-এনআরসি-র বিরোধিতার ডাক দিয়ে ওই জমায়েত করা হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ এর আগে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে যে রাজনৈতিক শক্তিগুলি অশান্তি তৈরি করেছিল, সে রকম কিছু সংগঠনের লোকজন মিশে ছিল ওই জমায়েতে। এবং তাঁদের উস্কানিতেই হিংসা তৈরি হয়।’’
আরও পড়ুন: মিছিল সামলাতে সংযম চান সিপি
এ দিন সুজাপুরের জমায়েত যে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকে ধর্মঘটের নয় তা স্বীকার করে নেন মালদহ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি বাবলা সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে এনআরসি বিরোধিতা করতে জমায়েত হয়েছিল। ওখানে সিপিএমের কোনও সংগঠন নেই। ওখানকার বিধায়ক কংগ্রেসের। সিপিএম-কংগ্রেস সংখ্যালঘু মানুষদের ভুল বুঝিয়ে অশান্তি পাকিয়েছে।” যদিও পাল্টা তৃণমূলকেই দায়ী করেছে কংগ্রেস। মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ ভাঙতে বিজেপি-তৃণমূলের লেঠেল বাহিনী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নির্বিচারে লাঠি চালায় কংগ্রেস সমর্থকদের উপর।” তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ক ঈশা খানের কেন্দ্রে কংগ্রেসকে দুর্বল করতেই এই চক্রান্ত।”
মারমুখী জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র
তবে সুজাপুরের মতো ঘটনার কিছু ইঙ্গিত দেখা গিয়েছে খাস কলকাতাতেও। পার্ক সার্কাস-কড়েয়া এলাকায় এ দিন বেশ কিছু যুবক জোর করে দোকান বন্ধ করায় বলে অভিযোগ। গোয়েন্দাদের দাবি, এরা ট্রেড ইউনিয়নের সমর্থক নন। বরং এঁরা সবাই এনআরসি-সিএএ বিরোধিী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। যদিও কলকাতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যায়নি পুলিশের তৎপরতায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy