Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Sovon Chatterjee

নিয়মিত ভাড়া পাঠিয়েছি, কিন্তু কেউ ভাড়া নেননি, গোলপার্কের ফ্ল্যাট নিয়ে দাবি বৈশাখীর

বৈশাখী বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের এই ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই এ সব করেছেন। কিন্তু আমরা আইনি পথেই এগোব। আমরা এখানে আইনসম্মত ভাবেই আছি।’’

শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ১৪:৩৪
Share: Save:

তিনি এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় আইনসিদ্ধ ভাবেই গোলপার্কের বহুতলের ফ্ল্যাটে আছেন। তার বৈধ নথি তাঁদের কাছে আছে। এবং তাঁরা ভাড়াটিয়া হিসেবে নিয়মিত ভাড়াও পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই ভাড়া নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন জল্পনা, আলোচনা, দ্বৈরথ, অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের জন্ম হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শোভন-বৈশাখীকে গোলপার্কের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে বলে শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের তরফে চিঠি পাঠানো।

সেই চিঠির প্রেক্ষিতেই বৈশাখী বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের এই ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই এ সব করেছেন। কিন্তু আমরা আইনি পথেই এগোব। আমরা এখানে যত বছর ধরে আছি, আইনসম্মত ভাবেই আছি। আমাদের কাছে তার বৈধ নথিও আছে।’’ বৈশাখীর আরও দাবি, ‘‘আমরা যতবছর এই ফ্ল্যাটে আছি, ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়াও পাঠিয়েছি। কিন্তু সেই ভাড়া ওঁরা নেননি।’’ সেই ভাড়া তাঁরা কী ভাবে পাঠিয়েছেন, ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের সরসারি জবাব দেননি বৈশাখী। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘যে ভাবে পাঠানোর, সে ভাবেই পাঠিয়েছি। কিন্তু ওঁরা ভাড়া নেননি। তবে ওঁরা এখন যখন আইনি নোটিস বা চিঠি পাঠিয়েছেন, তখন আমরাও আইনি পথেই চলব। আমাদের কাছে সমস্ত নথিপত্র আছে।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৭-য় বেহালার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন শোভন। ওঠেন গোলপার্কের ১৩৫, মেঘনাদ সাহা সরণির একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে। সে বছর জুলাই থেকে বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে রয়েছেন তিনি। স্ত্রী রত্নার সঙ্গে এখনও আইনি বিচ্ছেদ হয়নি শোভনের। কিন্তু গোলপার্কের যে ফ্ল্যাটে বৈশাখীর সঙ্গে ‘সংসার’ পেতেছেন শোভন, সেই ফ্ল্যাটের মালিক আসলে রত্নার দাদা দেবাশিস দাস। বেশ কয়েক বছর আগে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শোভন ওই ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করার পরেই রত্না দাবি করেছিলেন, ফ্ল্যাটটি আসলে শোভনের শ্যালকের নামে। ফলে শোভনের কোনও আইনি অধিকারই নেই ওই ফ্ল্যাটে থাকার। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে বলেছিলেন, শোভন ফ্ল্যাটটি ‘দখল’ করে রেখেছেন। একবার সন্তানদের নিয়ে সেই ফ্ল্যাটের নীচে অবস্থানেও বসেছিলেন রত্না। তবে সেই সময় বিষয়টি আর তার বেশি এগোয়নি।

শোভন-বৈশাখী সম্পর্ক যত গড়িয়েছে, ততই তিক্ত হয়েছে শোভন-রত্না সম্পর্কও। তার সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গিয়েছে শোভন নারদ-কান্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর। অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শোভন হাসপাতালের সুপারকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, রত্না বা তাঁর পুত্রকে যেন তাঁর আশেপাশে আসতে না-দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, এ বার রত্নার পরিবারও নতুন করে ‘প্রত্যাঘাত’ শুরু করেছে। নারদ-কান্ডে শোভন গ্রেফতার হন ১৭ তারিখ। ২২ তারিখ তিনি জামিন পেয়ে হাসপাতাল থেকে গোলপার্কের বাড়িতে ফেরেন। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার আগেই ওই ফ্ল্যাট নিয়ে দু’পক্ষের চাপানউতর শুরু হয়েছিল। গত ১১ শোভনকে ওই ফ্ল্যাট নিয়ে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন রত্নার বাবা তথা মহেশতলার তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাস। তাঁর ছোট ছেলে (শোভনের ছোট শ্যালক) শুভাশিসের সংস্থা ‘স্টার মার্ক কনস্ট্রাকশন কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মাধ্যমে শোভনকে আইনি নোটিস ধরান দুলাল।

তার পাল্টা আবার দুলালকে একটি চিঠি দেন শোভন-বৈশাখী। তাতে তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘রত্না কোন অধিকারে বেহালার বাড়ি আটকে রেখেছেন?’ সাত দিনের মধ্যে দুলালের কাছ থেকে জবাবও চেয়ে পাঠান তাঁরা। জবাব জানিয়ে দুলাল ফের শোভনকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তার পর শোভন-বৈশাখীর তরফে আর কিছু জানানো হয়নি বলেই দুলালের দাবি। সে কারণেই সম্প্রতি আবার শোভনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন দুলাল। সেই চিঠিতে তাঁকে সাত দিনের মধ্যে গোলপার্কের ফ্ল্যাটটি খালি করে দিতে বলা হয়েছে। আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে বুধবার এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে দুলাল বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যেই চিঠির জবাব দিয়েছিলাম। আমরা এর পর থেকে আইনি পথেই চলব।’’ এ নিয়ে শোভন-বৈশাখীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে এর আগে শোভনও জানিয়েছিলেন, তিনিও আইনি পথেই চলবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE