বিপর্যস্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বুধবার ফ্রেজারগঞ্জে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
সাইক্লোন বিধ্বস্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পরিদর্শন ঘিরেও রাজনীতি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাবুল সুপ্রিয়র রাস্তা আটকানোর অভিযোগ তুলল বিজেপি। আর ত্রাণ শিবির পরিদর্শনের সময়ে সরকারি সফরে থাকা মন্ত্রীকে ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলতে দেখা গেল স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের। তবে ৫ দিন ধরে কোনও খাবার না দেওয়ার যে অভিযোগ এ দিন ফ্রেজারগঞ্জের বাসিন্দারা করেছেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তা গুরুতর ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাবেন, বলে গিয়েছেন বাবুল।
সাইক্লোন বুলবুলের ঝাপটায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন, তা জানতে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে তাতেই থামেনি কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মোদী।
সেই নির্দেশ অনুযায়ীই বাবুল বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। কিন্তু বাবুলের এই পরিদর্শন নির্বিঘ্ন থাকেনি। তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো এবং ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলার ঘটনা এ দিন ঘটে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, এই রকম বিক্ষোভ যে হবে, তা তিনি জানতেন। তাঁর পরিদর্শন বানচাল করতে তৃণমূলই ওই বিক্ষোভ তৈরি করেছিল বলে আসানসোলের বিজেপি সাংসদের অভিযোগ।
দুর্গতদের মধ্যে বাবুল সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র
বাবুলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা সফর কিন্তু এ দিন প্রশাসন তথা শাসক দলের জন্য অস্বস্তিকর ছবিও তুলে ধরেছে। ফ্রেজারগঞ্জের সাতমাইল এলাকা পর্যন্ত পৌঁছোনর পর বাবুল সুপ্রিয়র গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথমে। সাতমাইলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু তার পরে আর গাড়ি নিয়ে এগনো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে বাবুলের কনভয় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্রেজারগঞ্জেরই দশমাইল এলাকায় তখন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা এবং দুর্গত মানুষজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। মন্ত্রী ফিরে যাচ্ছেন জানতে পেরে তারা ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন।
আরও পড়ুন: জলকামান-কাঁদানে গ্যাস-লাঠি, বিজেপির পুরসভা অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার চাঁদনি চকে
এই অবরোধের কথা জানতে পেরেই আবার গাড়ি ঘোরান বাবুল সুপ্রিয়। গাড়িতে যত দূর যাওয়া সম্ভব, তত দূর যান প্রথমে। তার পরে বাইক নিয়ে দশমাইলের দিকে রওনা দেন। নিজেই বাইক চালিয়ে সেখানে পৌঁছন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এবং ওই সেখানেই রাজ্য প্রশাসনের জন্য অস্বস্তিকর ছবিটা তৈরি হয়।
বাবুল যখন দশমাইলে পৌঁছন, তখন রাস্তাতেই বসে রয়েছেন দুর্গতদের অনেকে। তাঁদের তখন খিচুড়িও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে ভিড় ঠেলে প্রথমে এগিয়ে আসেন এক প্রবীণ এবং জানান, পাঁচ দিন ধরে তাদের জন্য কোনও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। বাবুল সেখানে পৌঁচনোর কিছুক্ষণ আগেই খাবার পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: অবসাদে-আতঙ্কে এখনও অসংলগ্ন কথাবার্তা পঞ্চসায়ের নির্যাতিতার, বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ
এই গুরুতর অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাস্তায় বসে থাকা বাকিদেরও জিজ্ঞাসা করেন, অভিযোগ সত্য কি না। সমস্বরে সকলে বাবুলকে জানান, পাঁচ দিন ধরে খাবার মেলেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসছেন শুনে এ দিন তড়িঘড়ি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, না হলে এ দিনও খাবার মিলত না— এমনও বলেন কেউ কেউ।
এ কথা শুনেই স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বাবুল। তিনি দাবি করেন, ত্রাণ শিবিরগুলিতে অব্যবস্থা চলছে এবং ত্রাণের টাকা লুঠ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে সব কথা তিনি বিশদে জানাবেন বলে বাবুল আশ্বাস দিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তবে তৃণমূলও পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। দুর্গত এলাকায় বিজেপি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া ভুলে বিজেপি রাজনীতি করছে বলে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী যখন পরিদর্শন করে গিয়েছেন, তখন আর কারও পরিদর্শনের প্রয়োজনই নেই— এমন মন্তব্য আগেই করেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। বাবুল সুপ্রিয়র সফর মেটার পরে জেলার অন্য তৃণমূল নেতারাও অভিযোগ করছেন যে, রাজনীতির জল গরম করতেই বাবুলকে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রী যখন সরকারি সফরে গিয়েছিলেন, তখন কেন তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানানো হবে? কেনই বা বিজেপির নামে স্লোগান উঠবে? প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
তবে রাজনীতির জলকে আরও অনেক দূর গড়িয়ে দিতে পারে বাবুলের এ দিনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা সফর। মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। পাঁচ দিন ধরে দুর্গতদের খাবার না দেওয়ার যে অভিযোগ এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন ফ্রেজারগঞ্জের বাসিন্দারা, সে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছবেই। তার প্রতিক্রিয়াটা কেমন হয়, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy