আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলেন না ববিতা। ফাইল চিত্র ।
আশঙ্কা তো ছিলই। তবে আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলেন না। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন ববিতা সরকার। কাঁদতে কাঁদতেই জানালেন, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও ভুল করেননি, করেছেন না বুঝে। পাশাপাশি তিনি আবেদন করেছেন, আদালতে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য যেন তাঁকে যেন কয়েক মাস সময় দেওয়া হয়। কাঁদতে কাঁদতে ববিতা বলেন, ‘‘আমি ভুলটা জানতাম না। আমার চাকরি চলে যাচ্ছে। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটু সময় দেওয়া হোক। এখন আমি ১১ লক্ষ ফেরত দিতে পারব। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছি। বাকি টাকা ফেরত দিতে একটু সময় লাগবে। তিন মাস সময় দেওয়া হোক আমাকে।’’
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ৬ জুনের মধ্যে ববিতাকে ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে হবে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার সেই টাকা নতুন চাকরি প্রাপক অনামিকা রায়ের হাতে তুলে দেবেন। তবে এত দিনে চাকরির জন্য যে বেতন পেয়েছেন ববিতা, সেই টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে না। অঙ্কিতার চাকরি যাওয়ার পর তাঁর টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে ববিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ মতো যে টাকা পেয়েছিলেন ববিতা, সেই টাকা ফেরত দিতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সেই টাকা জমা করার জন্যই সময় দেওয়ার আবেদন করলেন ববিতা।
ববিতার আবেদন শুনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ভুয়ো তথ্য দিয়ে আলাদতকে ভুল পথে পরিচালনার জন্য আদালত চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারত। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি আদালতকে যে ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে পরিচালনা করেছেন আমি চাইলে কড়া পদক্ষেপ করতে পারতাম। এই ক’দিনে আপনি যা বেতন পেয়েছেন তা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না। এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে হাই কোর্ট থেকে যান। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন। যা হয়েছে তা আপনার ভুলের জন্য।’’
পরে অবশ্য আদালত চত্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমার চাকরি চলে গেল। আমার ভুল না কমিশনের ভুল জানি না। আমার নথি তখনই খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। তখনই বলা উচিত ছিল। এক বছর চাকরি করার পর চাকরি কেড়ে নেওয়া কাম্য নয়।’’
এর আগে শিলিগুড়ির বাসিন্দা ববিতার আবেদনে চাকরি গিয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর। পরেশ-কন্যা অঙ্কিতাকে বেআইনি ভাবে শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন ববিতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, এসএসসির মেধাতালিকায় অনেক পিছনে থাকা অঙ্কিতার নাম প্রথমে নিয়ে আসায় তিনি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এর পর অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে ‘যোগ্য’ প্রার্থী হিসাবে ববিতাকে সেই চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অঙ্কিতার এত দিনের চাকরির সব বেতনও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ববিতাকে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ববিতার নিয়োগও। ববিতার চাকরি বাতিলের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরই শহরের এসএসসি পরীক্ষার্থী অনামিকা। অনামিকার অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতা স্নাতক স্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির নির্দেশে সেই চাকরি পেলেন অনামিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy