Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

আয়েশা-কাণ্ডে জেলা পুলিশের গাফিলতির কথা বলছে সিআইডি-ও

ডায়মন্ড হারবারে কিশোরীর নিখোঁজ রহস্যের শুরু থেকেই স্থানীয় জেলা পুলিশের দিকে গাফিলতির আঙুল তুলেছিলেন তার পরিবারের লোকেরা। এ বার সিআইডি তদন্তেও উঠে এসেছে একই বিষয়। সিআইডি অফিসারেরাও বলছেন, নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা পুলিশ তৎপর হলে আয়েশা (ওই কিশোরীর পরিবর্তিত নাম) নামে ওই কিশোরীকে এমন নির্যাতন সইতে হত না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:০০
Share: Save:

ডায়মন্ড হারবারে কিশোরীর নিখোঁজ রহস্যের শুরু থেকেই স্থানীয় জেলা পুলিশের দিকে গাফিলতির আঙুল তুলেছিলেন তার পরিবারের লোকেরা। এ বার সিআইডি তদন্তেও উঠে এসেছে একই বিষয়। সিআইডি অফিসারেরাও বলছেন, নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা পুলিশ তৎপর হলে আয়েশা (ওই কিশোরীর পরিবর্তিত নাম) নামে ওই কিশোরীকে এমন নির্যাতন সইতে হত না।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর নিজের এক আত্মীয়ার সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার গিয়েছিল ওই কিশোরী। ডায়মন্ড হারবার স্টেশনের বাইরে থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আয়েশা। ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর গাজিয়াবাদের তেগবাহাদুর হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খোঁজ মেলে ওই কিশোরীর। সে উত্তরপ্রদেশের পুলিশকে জানায়, তাকে পাচার করে এনে যৌন ব্যবসায় লাগানো হয়েছিল। লাগাতার ধর্ষণও করা হয়েছে তাকে। এই প্রসঙ্গেই আসলাম ও বাবুর নাম জানায় সে। আসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং জানতে পারে সে এইচআইভি আক্রান্ত। পরে কিশোরীর রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, ওই জীবাণু ছড়িয়ে গিয়েছে তার রক্তেও। ওই অভিযুক্তকে কলকাতায় আনার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সিআইডি।

ঘটনার গুরুত্ব আঁচ করে উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে। এ রাজ্যও ২১ ডিসেম্বর জেলা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার সিআইডি-কে দেয়। তার পরে বাবু এখনও অধরা। সিআইডি-র একটি সূত্র বলছে, মামলার তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর ফোনে ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। কিশোরীর পরিবারের সঙ্গেও বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বাবু নামে ওই যুবকই কিশোরীকে নিয়ে পালিয়েছিল। ওই কিশোরীর পাশাপাশি বাবুর ফোন নম্বর জোগাড় করেও মগরহাট থানার পুলিশকে দিয়েছিলেন তাঁরা। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার ডায়মন্ড হারবার থানার হাতে গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ‘‘মগরাহাট থানার পুলিশ একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেই দায় সেরেছিল। ডায়মন্ড হারবার থানাও চুপ করে বসেছিল। তার ফল ভুগতে হয়েছে ওই কিশোরীকে,’’ বলছেন এক সিআইডি-কর্তা।

গোয়েন্দা অফিসারেরা বলছেন, ফোনের সূত্র ধরে বড় ব়ড় মামলার সমাধান করা হয়। সেই সূত্রটুকু জেলা পুলিশ কাজে লাগায়নি। অথচ কিশোরী এবং বাবুর ফোন নম্বর এবং টাওয়ার লোকেশন ধরে খোঁজ করলে আগেই রহস্যের সমাধান করা যেত। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরী পরিবারের সদস্যদের ফোন করে জানায়, আসলাম নামে এক যুবকের কাছে তাকে দিল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছে বাবু। তখনও ফোন নম্বর ধরে রহস্যের সমাধান করেনি পুলিশ।

সিআইডি সূত্রের দাবি, এখন সেই সব কল ডিটেলস পাওয়া যাবে না। কারণ, কোনও বিশেষ কারণ না থাকলে এক বছর পরে ফোন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা কল ডিটেলস রেকর্ড নষ্ট করে ফেলে। তার ফলে বাবুর সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার এলাকায় আর কে কে এই চক্রে জড়িত বা ঘটনার পরে বাবুর সঙ্গে আর কাদের যোগাযোগ হয়েছিল, তা খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব।

জেলা পুলিশের এই গাফিলতির কথা রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের কানেও পৌঁছেছে। তেমনই এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু সিআইডি লিখিত ভাবে এখনও কিছু জানায়নি। সিআইডি-র রিপোর্ট পেলে জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।’’

সিআইডি জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে আয়েশাকে দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ-সহ আশপাশের বিভিন্ন রাজ্যে যৌন ব্যবসার কাজে লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে ওই কিশোরী দিল্লিতে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তদন্তের স্বার্থে সিআইডির গোয়েন্দারা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি যাবেন বলে ভবানী ভবন সূত্রের খবর।

সিআইডি সূত্রের খবর, ওই কিশোরীকে উদ্ধারের পর আসলাম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল গাজিয়াবাদের পুলিশ। কিন্তু তার মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করেনি সেখানকার পুলিশ। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দাদের একটি দল দিল্লিতে গিয়েছেন ওই অভিযুক্তকে জেরা করে কলকাতায় আনতে।

অন্য বিষয়গুলি:

ayesha cid police diamond harbour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy