শোকদৃষ্টি: দীপান্বিতা পান। আউশগ্রামের চণ্ডীপুরে বাপের বাড়িতে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
প্রসবের পরেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, জটিল রোগ রয়েছে সদ্যোজাতের। বাঁচানো মুশকিল। শুনে ভেঙে পড়েছিলেন দম্পতি। জন্মের তিন দিনের মাথায়, রবিবার সেই সন্তানের মৃত্যুর পরে তার কর্নিয়া দান করলেন পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের অরূপ পান ও দীপান্বিতা পান।
এত কমবয়সি কারও কর্নিয়া এ রাজ্যে তো বটেই, এ দেশেও কোথাও সংগৃহীত হয়নি বলে দাবি ‘দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র কর্তাদের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির (আরআইও) কর্নিয়া বিভাগের প্রধান জয়ন্ত দত্তও বলেন, ‘‘যত দিন কাজ করছি, এত কমবয়সি কারও কর্নিয়া দান, শুনিনি।’’
অণ্ডাল নর্থ বাজারের ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা অরূপ কাঁচরাপাড়া রেল ওয়র্কশপে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী দীপান্বিতা শুক্রবার দুর্গাপুরের বিধাননগরে এক বেসরকারি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তার পরেই চিকিৎসকেরা জানান, অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক তৈরি হচ্ছে না সদ্যোজাতের শরীরে। বাঁচার সম্ভাবনা বেশ কম। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদ্যন্ত্র বিকল ও ‘ব্রেন ডেথ’ হয়ে রবিবার সকালে মৃত্যু হয় শিশুটির।
অরূপ জানান, তাঁর দিদি মিঠু পান ওই হাসপাতালেই কাজ করেন। সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁরা যখন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ছেন, তখন দিদিই প্রথম চক্ষুদানের প্রস্তাব দেন। অরূপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মাথা তখন কাজ করছিল না। দিদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ছেলের চক্ষুদান করতে চাই কি না। সায় দিই।’’ মিঠুই খবর দেন ‘দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’কে। তাদের কর্মীরা দুপুরে হাসপাতালে এসে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। সেটি আরআইও-তে পাঠানো হচ্ছে।
দুর্গাপুরের ওই সংগঠনের কর্তাদের দাবি, এর আগে কেরলে আট দিনের একটি শিশুর কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তিন দিনের শিশুর কর্নিয়া সংগ্রহের ঘটনা এই প্রথম। সংগঠনের সম্পাদক কাজল রায় বলেন, ‘‘শিশুটির কর্নিয়া সংগ্রহে সম্মতি দেওয়ার জন্য ওই দম্পতিকে কুর্নিশ জানাই।’’
এই কর্নিয়া কি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব? আরআইও-র কর্নিয়া বিভাগের প্রধান জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘যদি কোনও সদ্যোজাতের কর্নিয়া প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে অন্য সব শর্ত পূরণ হলে এই কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।’’ একই কথা জানান ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অসীম ঘোষও। এসএসকেএম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অমিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এখন কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বয়স বাধা নয়। শিশুটির বাবা-মা যা করেছেন, চক্ষুদান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তা প্রশংসনীয়।’’
অরূপ ও দীপান্বিতা বলেন, ‘‘এত কষ্টের মধ্যেও একটাই সান্ত্বনা, আমাদের সন্তানের কোনও অঙ্গ হয়তো কারও মধ্যে বেঁচে থাকবে।’’ ওঁরা নিজেরাও মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy