প্রচার: বিজেপি প্রার্থী কমল সরকার। —নিজস্ব চিত্র
শুক্রবার বেলা দেড়টা। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের অনন্তপুর পঞ্চায়েতের ভেলাই এলাকা। একটি ছোট গাড়ি এসে দাঁড়াল। সেই গাড়ির ছাদে দু’টি মাইক বাঁধা রয়েছে। গাড়ির চারিদিকে গেরুয়া পতাকা পতপত করে উড়ছে। গাড়ির পিছনের আসনে বসে থাকা এক যুবক মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, ‘‘হামাগো মা, বোন, দিদি, ভাই দাদা, তুমরা এহানে অসো। হামাগো দুই সাংসদ তোমাগো কিছু বলিবে।’’ মাইকে সেই ঘোষণা হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ওই রাস্তায় পর পর তিনটি ছোটগাড়ি এসে দাঁড়াল। প্রথম গাড়ির সামনের আসন থেকে নামলেন কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কমল সরকার। একে একে অন্য গাড়িগুলো থেকে নামলেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ও জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়।
তৃণমূল কেন্দ্র জুড়ে প্রচার করছে এনআরসি নিয়ে। সুকান্ত আর জয়ন্তও দ্রুত চলে গেলেন সেই প্রসঙ্গে। বললেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। আগামী শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হবে। ওই বিল পাশ হলে অতীতে বাংলাদেশ থেকে কালিয়াগঞ্জে আসা শরণার্থী ও বৈধ নাগরিকদের অন্য দেশে যেতে হবে না।’’ পরে দুই সাংসদই জানান, নির্বাচনী প্রচারে এনআরসি নিয়ে তৃণমূল কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দাদের ভুল বোঝাচ্ছে, তাই দলের তরফে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। সন্ধ্যায় বরুণা গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব গোয়ালগাঁও এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’-এ যোগ দিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। সেখানে তিনিও বলেন, ‘‘সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে আপনাদের নথির জন্য ছুটোছুটি করতে হবে না। ওই বিলের ক্ষমতাবলে বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এ দেশে আসা হিন্দু নাগরিকদের কোনও সমস্যা হবে না। ৫০ বছর পরও এ দেশে এলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, এনআরসি নিয়ে এ ভাবে জবাবদিহি করছেন কেন বিজেপি নেতারা? তাঁরা নিজেরা অবশ্য জবাবদিহির প্রসঙ্গ অস্বীকার করছেন। তবে দলের মধ্যে একটি অংশ, যাঁরা প্রচারের নেপথ্যে রয়েছেন, তাঁদের কথায়, অসমে এনআরসি তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে তৃণমূল। এবং লোকের মধ্যে আতঙ্কও রয়েছে। লোকসভা ভোটের সময়ে এনআরসি নিয়ে প্রচার বিজেপির পালে যতটা হাওয়া দিয়েছিল, এ বার ঠিক তার উল্টোটা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম রব্বানি, প্রবীর ঘোষাল তো বটেই, প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ও রাজবংশী এলাকাগুলিতে ঘুরে এনআরসি নিয়ে প্রচার করছেন। যে রাজবংশী ভোটে ভর করে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটের লিড নিয়েছিল বিজেপি, সেখানে এখন তাই এনআরসি আতঙ্কের ছায়া। সেই ছায়া যাতে তাদের দেওয়ালের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে না পারে, সে জন্যই এ দিন জয়ন্ত, সুকান্ত, রাহুল সিংহের প্রচার। একই দিনে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও প্রচারে নেমেছেন কালিয়াগঞ্জে।
এই প্রচার প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানির বক্তব্য, ‘‘কালিয়াগঞ্জের রাজবংশী ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বহু বাসিন্দার ১৯৭১ সালের আগে জমির নথি নেই। বিজেপি আগে এনআরসি কার্যকরী করে তাঁদের দেশ থেকে তাড়ানোর কথা বলেছে। এখন তাই চাপে পড়ে গেরুয়া শিবির যা-ই বলুক, কালিয়াগঞ্জবাসী তা শুনবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy